পাঠ প্রতিক্রিয়া
সৌরভ বাঁক
দ্য কলিং অব হিস্টরি / স্যর যদুনাথ সরকার অ্যান্ড হিজ এম্পায়ার অব ট্রুথ। দীপেশ চক্রবর্তী।পার্মানেন্ট ব্ল্যাক,২০১৫, ৫৯৫।
"Reading is traveling without the bother of baggage."
( Emilio Salgari)
লকডাউনের শুরুতেই রামচন্দ্র গুহের একটি সম্পাদকীয় কলমে পড়া এই লাইনটা বেশ মনে ধরলো , মনে পড়লো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে" গানটির কথা । সুতরাং আমিও বইকে অবলম্বন করে হারিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিলাম । ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে আমাদের যা অভ্যাস সেই মত টাইম ট্রাভেল করবো বলেই মনস্থ করলাম । অর্থাৎ বর্তমানে বসে অতীতের একটি নির্দিষ্ট সময়ের বিশেষ একটি প্রক্রিয়াকে বুঝবো । এক্ষেত্রে আমার অবলম্বন হল দীপেশ চক্রবর্তীর The Calling of History বইটি। আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত তিনশো চার পাতার বইটির আলোচনা কাল বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধ । এই কালপর্বে স্যার যদুনাথ সরকারের কিছু লেখালেখিকে অবলম্বন করে লেখক' এদেশে যে প্রক্রিয়ায় ইতিহাস একটি গবেষণা যোগ্য ( অ্যাকাডেমিক) বিষয় হয়ে উঠলো ,সেই প্রক্রিয়ার সামাজিক ইতিহাস' রচনায় আগ্রহী। সুতরাং ভারতীয় জাতি নির্মাণ ও স্বাধীন জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশের মধ্যেকার সময়ে ঔপনিবেশিক ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক ও নিজের অধীত বিদ্যাকে খুঁজে দেখার যাত্রা শুরু হলো।
বইটি শুরু হয়েছে লেখকের একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে। গত শতাব্দীর নয়ের দশকের মাঝমাঝি কোনো এক সময়ে স্যার যদুনাথ সরকার ও তাঁর বন্ধু মারাঠি ঐতিহাসিক রাও বাহাদুর গোবিন্দরাও সখারাম সরদেশাইয়ের মধ্যে বিনিময় হওয়া দীর্ঘ পাঁচ দশকের (১৯০৭-১৯৫২) চিঠিপত্র লেখক শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগেনস্টাইন লাইব্রেরীতে খুঁজে পান। এই চিঠিপত্র গুলোই লেখককে অনুসন্ধিৎসু করে তোলে, যার পরিণামে লেখক রচনা করেছেন এই গ্রন্থটি । সমগ্র গ্রন্থে লেখকের এরকমই বহু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে রয়েছে । ফলে গ্রন্থটির আলোচনা কেবল বিংশ শতকের প্রথমার্ধে সীমাবদ্ধ থাকে না , প্রসঙ্গক্রমে বারে বারেই এসে পরে বিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ ও এই শতকের ঘটনাবলী।যা পাঠককে লেখক ও তার বিষয়ের মধ্যেকার সম্পর্ককে বুঝতে সহায়তা করে আলোচনাকে অনেক বেশি প্রানবন্ত করে তুলেছে ।
'বাংলার ইতিহাস নাই, যাহা আছে তাহা ইতিহাস নয়।…. বাংলার ইতিহাস চাই ,নহিলে বাংলার ভরসা নাই। কে লিখিবে ?
তুমি লিখিবে, আমি লিখিব, সকলেই লিখিবে । যে বাঙ্গালী তাহাকেই লিখিতে হবে।'
( 'বাঙ্গালার ইতিহাস সমন্ধে কয়েকটি কথা ' বঙ্কিম রচনাবলী খন্ড ২,সাহিত্য সংসদ,১৩৬১)
ইতিহাস রচনার জন্য বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের যে আকুল আবেদন তা কেবল তাঁর একার ছিল না,বঙ্কিমের নেতৃত্বে সেটা হয়ে উঠেছিল তাঁর সময়ের দাবী । ভারতের অন্তত দুটি অঞ্চলে ( বাংলা ও মহারাষ্ট্র) উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে এই দাবী ক্রমশ জোরালো হচ্ছিল । "কেননা, বিগত কালের ইতিহাসই হচ্ছে অনাগত কালের ইতিহাস রচনার ও শক্তি জোগাবার প্রধান উৎস।অতীতের কর্মকলাপ ও অভিজ্ঞতার রসধারায় পরিপুষ্ট হয়েই তো ভবিষ্যত ইতিহাসের মহীরুহ ঊর্ধ্ব আকাশে সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়াবার শক্তি পায় ।" তাই শুরু হয় ইতিহাসের অনুসন্ধান । প্রতাপাদিত্য , শিবাজি, সিরাজদ্দৌলা, রানাপ্রতাপের মত প্রাক ঔপনিবেশিক পর্বের চরিত্রদের জাতীয় বীর রূপে উপস্থাপন করে রচিত হতে থাকে একাধিক সাহিত্য, মঞ্চস্ত হয় নাটক।তবে শুধু ইতিহাস রচিত হলেই তো আর হবে না , ইতিহাস হওয়া চাই আধুনিক, ' বিজ্ঞানসম্মত'। কিন্তু কাকে বলে বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস ? সেই ইতিহাস রচনার উপাদানই বা কী? আর সমকালীন সময়ে রচিত সাহিত্য সমূহের মধ্যে কোনটি সেই বিচারে ইতিহাস বলে বিবেচিত হতে পারে আর কোনটা নয় ? এসব প্রশ্ন নিয়েই জনপরিসরে বিপুল তর্ক বিতর্ক চলতে থাকে। যদুনাথ সরকারের মধ্যেও সমকালীন এই ইতিহাস আগ্রহ জারিত হয়, তিনিও অংশ নিতে থাকেন এই সকল বিতর্কে । আর এসবের মধ্যে দিয়েই তিনি ইতিহাস রচনার জাতিয়তাবাদী প্রকল্পের অংশ হয়ে ওঠেন । জাতিয়তাবাদী প্রকল্পে ইতিহাস রচনার এই আহ্বানকে লেখক তার গ্রন্থের নামে 'The Calling of History' বলে উল্লেখ করেছেন।তবে যদুনাথ ছিলেন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ছত্রছায়ায় লালিত পালিত। ঔপনিবেশিক শিক্ষায় শিক্ষিত। যে শিক্ষা তাঁকে ভাবতে শিখিয়েছিল ইংরেজরা ভারতকে অষ্টাদশ শতকের অন্ধকার থেকে মুক্তি দিয়ে নিয়ে এসেছে উনিশ শতকের রেনেসাঁসের কালে, ফলে নির্মিত হয়েছে আধুনিক যুগের ভিত্তি । যদুনাথ ছিলেন ইউরোপীয় সভ্যতার গুণগ্রাহী, নিজের ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবনে তিনি ধারণ করেছিলেন সেই সভ্যতার মূল্যবোধকে; যেজন্য লেখক তাঁকে 'a child of Empire' বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি চাইতেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা, তবে তার আগে ভারতবাসীর একটি প্রস্তুতি পর্বের প্রয়োজন বলে মনে করতেন। যখন দেশবাসী নিজেদের দোষ ত্রুটি সম্পর্কে অবগত হবে এবং বৃটিশদের নেতৃত্বে থেকে আয়ত্ত করতে পারবে আধুনিক জাতির গুণাবলি সমূহ । আর ঐতিহাসিক জাতির অতীত ইতিহাস অনুসন্ধান করে জাতির দোষ ত্রুটি নির্ণয়ে সহায়তা করে জাতি নির্মাণে সহায়ক হবেন । যদুনাথের এই ভাবাদর্শ তাঁর রচিত ইতিহাসে ছাপ রেখেছে। আলোচ্য গ্রন্থে লেখক সেই বিশ্লেষণ যেমন করেছেন তেমনি প্রসঙ্গক্রমে যথাযত কারণেই পাঠককে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ঔপনিবেশিক ভারতের জাতি কল্পনায় বিভিন্ন ধারণার সহাবস্থানের কথা । আর যদুনাথের নামের সাথে গ্রন্থের নামে ব্রিটিশ প্রদত্ত 'Sir' উপাধিটি জুড়ে দিয়ে লেখক যদুনাথের ইতিহাস দর্শনে দ্বান্দ্বিক সহাবস্থানের ইঙ্গিত রেখেছেন ।
বিশশতকের প্রারম্ভে ইতিহাস ছিল সাহিত্যের অংশ, তাই ইতিহাস রচনা সাহিত্য কর্ম বলেই বিবেচিত হতো। যদুনাথ নিজেও ছিলেন মূলত ইংরেজির সাহিত্যের ছাত্র এবং অধ্যাপক ।যদুনাথ মনে করতেন শাসকের কর্মকাণ্ডই সমাজের প্রধান চালিকা শক্তি। তাই তার রচিত ইতিহাসে নায়ক ও তাদের চারিত্রিক দোষ গুণ গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হতো ।কিন্তু চল্লিশের দশক থেকে অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রক্রিয়ার মত বড়ো বড়ো একক গুলির কথা মাথায় রেখে ইতিহাস রচিত হতে থাকে। এই ধারার গবেষণায় ব্যক্তির কর্মকাণ্ডকে বড়ো বড়ো প্রক্রিয়ার প্রতিফলন হিসেবেই দেখা হতো। আর এভাবেই ইতিহাস ক্রমশ সমাজ বিজ্ঞানের অংশ হয়ে উঠতে থাকে । ফলে যদুনাথের পরবর্তী প্রজন্মের ঐতিহাসিকগণ ভারতীয় ইতিহাস গবেষণায় তার অবদান বিচার করতে গিয়ে তিনি কি করেননি সেই প্রেক্ষিতে তার মূল্যায়ণ করতে গিয়েছেন, ফলে বলা হয়ে ওঠেনি তার সময়ের প্রেক্ষিতে তিনি ঠিক কি করে যেতে পেরেছিলেন । এইদিক থেকে বিচার করলে দীপেশ চক্রবর্তীর বর্তমান বইটি আমাদের ইতিহাস চর্চার সেই গুরুত্বপূর্ণ শূন্যস্থান পূরণ করলো।
ইতিহাসকে পুরাণ, রূপকথা, অতিকথা থেকে বিযুক্ত করে প্রামাণ্য উপাদান নির্ভর করার জন্য যদুনাথ আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন । তাঁর মতে ইতিহাসের উপাদান কেবল অতীতের হলেই হবে না, হতে হবে ঐতিহাসিক ঘটনার যথাসম্ভব সমসাময়িক । ঐতিহাসিক সেই উপাদানকে একজন দক্ষ গোয়েন্দার মত বিচার বিশ্লেষণ করে যথার্থ ঐতিহাসিক সত্য উদঘাটন করবেন । এই সত্য তথ্যের উপর নির্ভর করেই রচিত হবে প্রকৃত ( সত্য) ইতিহাস। সাম্প্রতিক কালে আমাদের দেশে জন পরিসরে ইতিহাসকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া একের পর এক বিতর্কের প্রেক্ষিতে যদুনাথ সরকারের এই অবস্থান হয়তো আমাদের পথ দেখাতে পারে ।
দীপেশ চক্রবর্তী এই বইটি অসম্ভব সহমর্মিতার সঙ্গে রচনা করেছেন।ফলে স্যার যদুনাথ ও লেখকের মধ্যেকার বিস্তর ব্যাবধান সত্বেও দুজনকে অনেকটা কাছাকাছি এনে দিয়েছে । যেমন বইটির শেষ অংশটির কথা ধরা যেতে পারে। এই অংশে স্যার যদুনাথ সরকারের বাসভবনে তার সাথে লেখকের একটি কাল্পনিক কথোপকথন রয়েছে। এই অংশে একজন কলোনিয়াল পর্বের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিকের কাছ থেকে তাঁর বর্তমান উত্তরসূরি বুঝে নিতে চাইছেন তাঁর কাজের পরিধি ও দর্শন সম্পর্কে । বাক্যালাপ যত এগিয়েছে গত একশো বছরে ক্রমশ বদলে যাওয়া ভারতীয় রাজনীতির প্রভাবে যেভাবে ইতিহাস চর্চা প্রভাবিত হয়েছে তা অনুভব করে দুই প্রবীণ ঐতিহাসিকেরই দীর্ঘশ্বাস প্রলম্বিত হয়েছে। এই দীর্ঘশ্বাসের সাথে অবশ্য শিল্প সাহিত্য চর্চার সাথে যুক্ত অনেকেই নিজের অভিজ্ঞতার নিরিখে সমব্যাথী হতে পারেন।
অ্যাকাডেমিক ইতিহাসের বইতে কাল্পনিক কথোপকথনের কথা শুনে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন। কিন্তু যদুনাথ সরকার নিজেই তো বঙ্কিম চন্দ্রের সাতটি উপন্যাসকে ঐতিহাসিক উপন্যাসের স্বীকৃতি দিয়ে গিয়েছিলেন কেবল বঙ্কিম যথাযথভাবে অতীতের সজীব বাতাবরণ ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন বলে।৫সুতরাং এই আলোচনা সেই দিক থেকে যদুনাথ সরকারের ইতিহাস দর্শনের অনুসারী হয়েছে সেকথা বলাই যায় । আমার কাছে বইটির এই অংশটি সবথেকে আকর্ষনীয় মনে হয়েছে । তবে এই অংশটি পড়তে পড়তে পাঠক যদি কথোপকথনটি কখন হলো অর্থাৎ কোন সাল কোন তারিখ তা খুঁজে দেখতে যান তবে তাকে হোঁচট খেতে হতে পারে । কারণ লেখক স্থান উল্লেখ করেছেন , ভোরবেলা যে বাক্যালাপ হয়েছে তাও উল্লেখ করেছেন কিন্তু কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি ।তবে একটি অংশ থেকে সেন্টারের রেজিস্টার হিসাবে সুশান্ত ঘোষের কার্যকালে যে উভয়ের সাক্ষাৎ সেটা স্পষ্ট। আবার লেখক নিজেই গ্রন্থের ভূমিকা অংশে (পৃষ্ঠা ৩৭) জানিয়েছেন যে সেন্টারের রেজিস্টার হিসাবে সুশান্ত ঘোষের কার্যকাল বিশ শতকের সাতের দশক । সুতরাং ভেবে নিতে হয় কল্পিত কথোপকথনটি ওই সময়েরই কোনো একদিনের । আবার উভয়ের বাককালাপের শেষে লেখক যদুনাথ সরকারকে জানান বাঙালি পণ্ডিতদের মধ্যে আপনি ভাগ্যবান, আপনার বাড়িতে এখনও বিদ্যা চর্চা হচ্ছে প্রখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের বসতবাড়িটি তো এখন একটি মার্কিন কোম্পানির হাল ফ্যাশনের জামাকাপড়ের দোকানে রূপান্তরিত হয়েছে । আমরা জানি বাংলা তথা ভারতে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানির বিপণন খোলা তো গত শতাব্দীর একেবারে শেষ দিকের ঘটনা। সুতরাং দুই ঐতিহাসিকের সাক্ষাতের সময়কালটি অস্পষ্টই থেকে যায়। তবে এটুকু অস্পষ্টতা গ্রন্থ পাঠে খুব একটা সমস্যা সৃষ্টি করে না । বরং বইটি শেষ করে পাঠক একটি অসম্ভব ভালো গ্রন্থ পাঠের অনুভূতি যেমন পাবেন তেমনি তার মনে ভিড় করে আসবে ইতিহাসচর্চার অতীত এবং বর্তমান সংক্রান্ত নানান বিকল্প প্রশ্ন। আর এইসব প্রশ্নের মধ্য দিয়েই তো অতীতের সাথে বর্তমানের নিরন্তর সংলাপ চলতে থাকে ,ইতিহাসের চরিত্রেরা খুঁজে পায় ভাষা ।
সহায়ক উপাদান
১. The Telegraph , Kolkata , 28 March 2020.
২. প্রবোধ চন্দ্র সেন। বাংলার ইতিহাস - সাধনা, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা ,২০১৭।
৪. উনিশ শতকের শেষ পর্বে রচিত ইতিহাস আশ্রিত সাহিত্য প্রসঙ্গে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় রচিত সিরাজদ্দৌলা (১৮৯৭), দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত রাণা প্রতাপসিংহ (১৯০৫),ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের বঙ্গের প্রতাপাদিত্য (১৯০৩) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।
৫. বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত বঙ্কিম রচনাবলীর শতবার্ষিক সংস্করণে যদুনাথ সরকার কৃত উপন্যাস সমূহের ভূমিকা অংশে বঙ্কিম চন্দ্রের উপন্যাস বিষয়ে যদুনাথের বক্তব্য পাওয়া যায়।
৭. দীপেশ চক্রবর্তী । ইতিহাসের জনজীবন ও অন্যান্য প্রবন্ধ,আনন্দ, কলকাতা ২০১১.
৮.দীপেশ চক্রবর্তী । মনোরথের ঠিকানা , অনুষ্টুপ কলকাতা ২০১৮.
অতীতের সাথে চলতে থাকা নিরন্তর কথোপকথন
সৌরভ বাঁক
দ্য কলিং অব হিস্টরি / স্যর যদুনাথ সরকার অ্যান্ড হিজ এম্পায়ার অব ট্রুথ। দীপেশ চক্রবর্তী।পার্মানেন্ট ব্ল্যাক,২০১৫, ৫৯৫।
"Reading is traveling without the bother of baggage."
( Emilio Salgari)
লকডাউনের শুরুতেই রামচন্দ্র গুহের একটি সম্পাদকীয় কলমে পড়া এই লাইনটা বেশ মনে ধরলো , মনে পড়লো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে" গানটির কথা । সুতরাং আমিও বইকে অবলম্বন করে হারিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিলাম । ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে আমাদের যা অভ্যাস সেই মত টাইম ট্রাভেল করবো বলেই মনস্থ করলাম । অর্থাৎ বর্তমানে বসে অতীতের একটি নির্দিষ্ট সময়ের বিশেষ একটি প্রক্রিয়াকে বুঝবো । এক্ষেত্রে আমার অবলম্বন হল দীপেশ চক্রবর্তীর The Calling of History বইটি। আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত তিনশো চার পাতার বইটির আলোচনা কাল বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধ । এই কালপর্বে স্যার যদুনাথ সরকারের কিছু লেখালেখিকে অবলম্বন করে লেখক' এদেশে যে প্রক্রিয়ায় ইতিহাস একটি গবেষণা যোগ্য ( অ্যাকাডেমিক) বিষয় হয়ে উঠলো ,সেই প্রক্রিয়ার সামাজিক ইতিহাস' রচনায় আগ্রহী। সুতরাং ভারতীয় জাতি নির্মাণ ও স্বাধীন জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশের মধ্যেকার সময়ে ঔপনিবেশিক ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক ও নিজের অধীত বিদ্যাকে খুঁজে দেখার যাত্রা শুরু হলো।
বইটি শুরু হয়েছে লেখকের একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে। গত শতাব্দীর নয়ের দশকের মাঝমাঝি কোনো এক সময়ে স্যার যদুনাথ সরকার ও তাঁর বন্ধু মারাঠি ঐতিহাসিক রাও বাহাদুর গোবিন্দরাও সখারাম সরদেশাইয়ের মধ্যে বিনিময় হওয়া দীর্ঘ পাঁচ দশকের (১৯০৭-১৯৫২) চিঠিপত্র লেখক শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগেনস্টাইন লাইব্রেরীতে খুঁজে পান। এই চিঠিপত্র গুলোই লেখককে অনুসন্ধিৎসু করে তোলে, যার পরিণামে লেখক রচনা করেছেন এই গ্রন্থটি । সমগ্র গ্রন্থে লেখকের এরকমই বহু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে রয়েছে । ফলে গ্রন্থটির আলোচনা কেবল বিংশ শতকের প্রথমার্ধে সীমাবদ্ধ থাকে না , প্রসঙ্গক্রমে বারে বারেই এসে পরে বিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ ও এই শতকের ঘটনাবলী।যা পাঠককে লেখক ও তার বিষয়ের মধ্যেকার সম্পর্ককে বুঝতে সহায়তা করে আলোচনাকে অনেক বেশি প্রানবন্ত করে তুলেছে ।
'বাংলার ইতিহাস নাই, যাহা আছে তাহা ইতিহাস নয়।…. বাংলার ইতিহাস চাই ,নহিলে বাংলার ভরসা নাই। কে লিখিবে ?
তুমি লিখিবে, আমি লিখিব, সকলেই লিখিবে । যে বাঙ্গালী তাহাকেই লিখিতে হবে।'
( 'বাঙ্গালার ইতিহাস সমন্ধে কয়েকটি কথা ' বঙ্কিম রচনাবলী খন্ড ২,সাহিত্য সংসদ,১৩৬১)
ইতিহাস রচনার জন্য বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের যে আকুল আবেদন তা কেবল তাঁর একার ছিল না,বঙ্কিমের নেতৃত্বে সেটা হয়ে উঠেছিল তাঁর সময়ের দাবী । ভারতের অন্তত দুটি অঞ্চলে ( বাংলা ও মহারাষ্ট্র) উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে এই দাবী ক্রমশ জোরালো হচ্ছিল । "কেননা, বিগত কালের ইতিহাসই হচ্ছে অনাগত কালের ইতিহাস রচনার ও শক্তি জোগাবার প্রধান উৎস।অতীতের কর্মকলাপ ও অভিজ্ঞতার রসধারায় পরিপুষ্ট হয়েই তো ভবিষ্যত ইতিহাসের মহীরুহ ঊর্ধ্ব আকাশে সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়াবার শক্তি পায় ।" তাই শুরু হয় ইতিহাসের অনুসন্ধান । প্রতাপাদিত্য , শিবাজি, সিরাজদ্দৌলা, রানাপ্রতাপের মত প্রাক ঔপনিবেশিক পর্বের চরিত্রদের জাতীয় বীর রূপে উপস্থাপন করে রচিত হতে থাকে একাধিক সাহিত্য, মঞ্চস্ত হয় নাটক।তবে শুধু ইতিহাস রচিত হলেই তো আর হবে না , ইতিহাস হওয়া চাই আধুনিক, ' বিজ্ঞানসম্মত'। কিন্তু কাকে বলে বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস ? সেই ইতিহাস রচনার উপাদানই বা কী? আর সমকালীন সময়ে রচিত সাহিত্য সমূহের মধ্যে কোনটি সেই বিচারে ইতিহাস বলে বিবেচিত হতে পারে আর কোনটা নয় ? এসব প্রশ্ন নিয়েই জনপরিসরে বিপুল তর্ক বিতর্ক চলতে থাকে। যদুনাথ সরকারের মধ্যেও সমকালীন এই ইতিহাস আগ্রহ জারিত হয়, তিনিও অংশ নিতে থাকেন এই সকল বিতর্কে । আর এসবের মধ্যে দিয়েই তিনি ইতিহাস রচনার জাতিয়তাবাদী প্রকল্পের অংশ হয়ে ওঠেন । জাতিয়তাবাদী প্রকল্পে ইতিহাস রচনার এই আহ্বানকে লেখক তার গ্রন্থের নামে 'The Calling of History' বলে উল্লেখ করেছেন।তবে যদুনাথ ছিলেন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ছত্রছায়ায় লালিত পালিত। ঔপনিবেশিক শিক্ষায় শিক্ষিত। যে শিক্ষা তাঁকে ভাবতে শিখিয়েছিল ইংরেজরা ভারতকে অষ্টাদশ শতকের অন্ধকার থেকে মুক্তি দিয়ে নিয়ে এসেছে উনিশ শতকের রেনেসাঁসের কালে, ফলে নির্মিত হয়েছে আধুনিক যুগের ভিত্তি । যদুনাথ ছিলেন ইউরোপীয় সভ্যতার গুণগ্রাহী, নিজের ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবনে তিনি ধারণ করেছিলেন সেই সভ্যতার মূল্যবোধকে; যেজন্য লেখক তাঁকে 'a child of Empire' বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি চাইতেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা, তবে তার আগে ভারতবাসীর একটি প্রস্তুতি পর্বের প্রয়োজন বলে মনে করতেন। যখন দেশবাসী নিজেদের দোষ ত্রুটি সম্পর্কে অবগত হবে এবং বৃটিশদের নেতৃত্বে থেকে আয়ত্ত করতে পারবে আধুনিক জাতির গুণাবলি সমূহ । আর ঐতিহাসিক জাতির অতীত ইতিহাস অনুসন্ধান করে জাতির দোষ ত্রুটি নির্ণয়ে সহায়তা করে জাতি নির্মাণে সহায়ক হবেন । যদুনাথের এই ভাবাদর্শ তাঁর রচিত ইতিহাসে ছাপ রেখেছে। আলোচ্য গ্রন্থে লেখক সেই বিশ্লেষণ যেমন করেছেন তেমনি প্রসঙ্গক্রমে যথাযত কারণেই পাঠককে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ঔপনিবেশিক ভারতের জাতি কল্পনায় বিভিন্ন ধারণার সহাবস্থানের কথা । আর যদুনাথের নামের সাথে গ্রন্থের নামে ব্রিটিশ প্রদত্ত 'Sir' উপাধিটি জুড়ে দিয়ে লেখক যদুনাথের ইতিহাস দর্শনে দ্বান্দ্বিক সহাবস্থানের ইঙ্গিত রেখেছেন ।
বিশশতকের প্রারম্ভে ইতিহাস ছিল সাহিত্যের অংশ, তাই ইতিহাস রচনা সাহিত্য কর্ম বলেই বিবেচিত হতো। যদুনাথ নিজেও ছিলেন মূলত ইংরেজির সাহিত্যের ছাত্র এবং অধ্যাপক ।যদুনাথ মনে করতেন শাসকের কর্মকাণ্ডই সমাজের প্রধান চালিকা শক্তি। তাই তার রচিত ইতিহাসে নায়ক ও তাদের চারিত্রিক দোষ গুণ গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হতো ।কিন্তু চল্লিশের দশক থেকে অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রক্রিয়ার মত বড়ো বড়ো একক গুলির কথা মাথায় রেখে ইতিহাস রচিত হতে থাকে। এই ধারার গবেষণায় ব্যক্তির কর্মকাণ্ডকে বড়ো বড়ো প্রক্রিয়ার প্রতিফলন হিসেবেই দেখা হতো। আর এভাবেই ইতিহাস ক্রমশ সমাজ বিজ্ঞানের অংশ হয়ে উঠতে থাকে । ফলে যদুনাথের পরবর্তী প্রজন্মের ঐতিহাসিকগণ ভারতীয় ইতিহাস গবেষণায় তার অবদান বিচার করতে গিয়ে তিনি কি করেননি সেই প্রেক্ষিতে তার মূল্যায়ণ করতে গিয়েছেন, ফলে বলা হয়ে ওঠেনি তার সময়ের প্রেক্ষিতে তিনি ঠিক কি করে যেতে পেরেছিলেন । এইদিক থেকে বিচার করলে দীপেশ চক্রবর্তীর বর্তমান বইটি আমাদের ইতিহাস চর্চার সেই গুরুত্বপূর্ণ শূন্যস্থান পূরণ করলো।
ইতিহাসকে পুরাণ, রূপকথা, অতিকথা থেকে বিযুক্ত করে প্রামাণ্য উপাদান নির্ভর করার জন্য যদুনাথ আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন । তাঁর মতে ইতিহাসের উপাদান কেবল অতীতের হলেই হবে না, হতে হবে ঐতিহাসিক ঘটনার যথাসম্ভব সমসাময়িক । ঐতিহাসিক সেই উপাদানকে একজন দক্ষ গোয়েন্দার মত বিচার বিশ্লেষণ করে যথার্থ ঐতিহাসিক সত্য উদঘাটন করবেন । এই সত্য তথ্যের উপর নির্ভর করেই রচিত হবে প্রকৃত ( সত্য) ইতিহাস। সাম্প্রতিক কালে আমাদের দেশে জন পরিসরে ইতিহাসকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া একের পর এক বিতর্কের প্রেক্ষিতে যদুনাথ সরকারের এই অবস্থান হয়তো আমাদের পথ দেখাতে পারে ।
দীপেশ চক্রবর্তী এই বইটি অসম্ভব সহমর্মিতার সঙ্গে রচনা করেছেন।ফলে স্যার যদুনাথ ও লেখকের মধ্যেকার বিস্তর ব্যাবধান সত্বেও দুজনকে অনেকটা কাছাকাছি এনে দিয়েছে । যেমন বইটির শেষ অংশটির কথা ধরা যেতে পারে। এই অংশে স্যার যদুনাথ সরকারের বাসভবনে তার সাথে লেখকের একটি কাল্পনিক কথোপকথন রয়েছে। এই অংশে একজন কলোনিয়াল পর্বের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিকের কাছ থেকে তাঁর বর্তমান উত্তরসূরি বুঝে নিতে চাইছেন তাঁর কাজের পরিধি ও দর্শন সম্পর্কে । বাক্যালাপ যত এগিয়েছে গত একশো বছরে ক্রমশ বদলে যাওয়া ভারতীয় রাজনীতির প্রভাবে যেভাবে ইতিহাস চর্চা প্রভাবিত হয়েছে তা অনুভব করে দুই প্রবীণ ঐতিহাসিকেরই দীর্ঘশ্বাস প্রলম্বিত হয়েছে। এই দীর্ঘশ্বাসের সাথে অবশ্য শিল্প সাহিত্য চর্চার সাথে যুক্ত অনেকেই নিজের অভিজ্ঞতার নিরিখে সমব্যাথী হতে পারেন।
অ্যাকাডেমিক ইতিহাসের বইতে কাল্পনিক কথোপকথনের কথা শুনে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন। কিন্তু যদুনাথ সরকার নিজেই তো বঙ্কিম চন্দ্রের সাতটি উপন্যাসকে ঐতিহাসিক উপন্যাসের স্বীকৃতি দিয়ে গিয়েছিলেন কেবল বঙ্কিম যথাযথভাবে অতীতের সজীব বাতাবরণ ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন বলে।৫সুতরাং এই আলোচনা সেই দিক থেকে যদুনাথ সরকারের ইতিহাস দর্শনের অনুসারী হয়েছে সেকথা বলাই যায় । আমার কাছে বইটির এই অংশটি সবথেকে আকর্ষনীয় মনে হয়েছে । তবে এই অংশটি পড়তে পড়তে পাঠক যদি কথোপকথনটি কখন হলো অর্থাৎ কোন সাল কোন তারিখ তা খুঁজে দেখতে যান তবে তাকে হোঁচট খেতে হতে পারে । কারণ লেখক স্থান উল্লেখ করেছেন , ভোরবেলা যে বাক্যালাপ হয়েছে তাও উল্লেখ করেছেন কিন্তু কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি ।তবে একটি অংশ থেকে সেন্টারের রেজিস্টার হিসাবে সুশান্ত ঘোষের কার্যকালে যে উভয়ের সাক্ষাৎ সেটা স্পষ্ট। আবার লেখক নিজেই গ্রন্থের ভূমিকা অংশে (পৃষ্ঠা ৩৭) জানিয়েছেন যে সেন্টারের রেজিস্টার হিসাবে সুশান্ত ঘোষের কার্যকাল বিশ শতকের সাতের দশক । সুতরাং ভেবে নিতে হয় কল্পিত কথোপকথনটি ওই সময়েরই কোনো একদিনের । আবার উভয়ের বাককালাপের শেষে লেখক যদুনাথ সরকারকে জানান বাঙালি পণ্ডিতদের মধ্যে আপনি ভাগ্যবান, আপনার বাড়িতে এখনও বিদ্যা চর্চা হচ্ছে প্রখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের বসতবাড়িটি তো এখন একটি মার্কিন কোম্পানির হাল ফ্যাশনের জামাকাপড়ের দোকানে রূপান্তরিত হয়েছে । আমরা জানি বাংলা তথা ভারতে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানির বিপণন খোলা তো গত শতাব্দীর একেবারে শেষ দিকের ঘটনা। সুতরাং দুই ঐতিহাসিকের সাক্ষাতের সময়কালটি অস্পষ্টই থেকে যায়। তবে এটুকু অস্পষ্টতা গ্রন্থ পাঠে খুব একটা সমস্যা সৃষ্টি করে না । বরং বইটি শেষ করে পাঠক একটি অসম্ভব ভালো গ্রন্থ পাঠের অনুভূতি যেমন পাবেন তেমনি তার মনে ভিড় করে আসবে ইতিহাসচর্চার অতীত এবং বর্তমান সংক্রান্ত নানান বিকল্প প্রশ্ন। আর এইসব প্রশ্নের মধ্য দিয়েই তো অতীতের সাথে বর্তমানের নিরন্তর সংলাপ চলতে থাকে ,ইতিহাসের চরিত্রেরা খুঁজে পায় ভাষা ।
সহায়ক উপাদান
১. The Telegraph , Kolkata , 28 March 2020.
২. প্রবোধ চন্দ্র সেন। বাংলার ইতিহাস - সাধনা, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা ,২০১৭।
৪. উনিশ শতকের শেষ পর্বে রচিত ইতিহাস আশ্রিত সাহিত্য প্রসঙ্গে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় রচিত সিরাজদ্দৌলা (১৮৯৭), দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত রাণা প্রতাপসিংহ (১৯০৫),ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের বঙ্গের প্রতাপাদিত্য (১৯০৩) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।
৫. বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত বঙ্কিম রচনাবলীর শতবার্ষিক সংস্করণে যদুনাথ সরকার কৃত উপন্যাস সমূহের ভূমিকা অংশে বঙ্কিম চন্দ্রের উপন্যাস বিষয়ে যদুনাথের বক্তব্য পাওয়া যায়।
৭. দীপেশ চক্রবর্তী । ইতিহাসের জনজীবন ও অন্যান্য প্রবন্ধ,আনন্দ, কলকাতা ২০১১.
৮.দীপেশ চক্রবর্তী । মনোরথের ঠিকানা , অনুষ্টুপ কলকাতা ২০১৮.
সমৃদ্ধ হলাম
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুন