হীরক রায় চৌধুরীর কবিতা
রূপান্তর
কোনো বিষয়ই এখন আর চ'লে ফিরে
বেড়াচ্ছে না, বচন পরমাণু হতে গিয়েও
আধ খাওয়া জলের গ্লাসের মতো সত্যি হ'য়ে
চোখের সামনে!চোখ!যত বৃদ্ধ
হোক দেখে চলেছে ছানি কেটে
লেন্সের সাহায্য নিয়ে বেশ
পরিষ্কার ,শেষের কবিতায়
মহাপৃথিবীর সন্ধানে মাঝে
মাঝে জলও ঝরে আর তাতেই
অবাক কান্ড ! ভেসে যায় আলপনা
দেওয়া মেঝে, পুরোনো জমির ওপরের
কিন্ডারগার্টেন পাঠশালা; মোড়ের
দোকানে মুরগির গলা কাটা
হলে রক্তের ফোঁটা দূরে দাঁড়ানো লোকদের
জামায়, তারা হাসিমুখে খাবার নিয়ে ঘরে নিশ্চিন্তে
পৌঁছে যায় সন্ততিদের সঙ্গে নিয়ে
খেয়ে দেয়ে ভাতঘুম দেবে বলে,শ্মশানে
দেহ ধোয়াবে যে সে বিমূর্ততার
সীমানা পেরিয়ে এসে অনন্ত
সামনে ধুতির কোঁচা ধরে এলিয়েন
ব্রহ্মার জন্য হাপিত্যেশ করছে কিনা অথবা
একেবারে গেঁজেল মাতাল ব'নে যাচ্ছে কিনা
তাও বলা যাচ্ছে না;স্নায়ুরোগের অনন্য
সংজ্ঞা নির্ধারণ হওয়ার পরপরই চাকার
আধুনিকীকরণে মন দেবার পালা এসেছে,
যদিও চাকার কার্যকলাপ বোঝার ক্ষমতা
প্রেম, মায়া ও সখিপনা দিয়ে হবে না এটা
বুঝতে গিয়েই পরজীবী রাজা, রাণী, হাতি,
ঘোড়া এমনকি মহাবিশ্বও বহুবার জলের
প্রকৃতিতে ডুবেছে তাদের সময়ে
নিজেদের রূপান্তরের আগে!
বিরিঞ্চিবেড়িয়ার মহাপৃথিবী
উৎসর্গ- শম্ভু রক্ষিত
পাখি ডাকে শম্ভু রক্ষিতের খামারবাড়ির সাজানো বাগানে,
তেড়েফুঁড়ে কাটারি হাতে বাগানখানা আমি লন্ডভন্ড করে দিতে যাই,
কে যেন তখনি একেবারে কানের পাশটিতে বলল"কিসের তালিম
নিবি আগে বিসংগত গানের?নাকি আমার স্বরচিত 'পাথরচাপা রহস্য'ময়
মন্দির থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মিখোঁজার সাধনার ,ভেবে ঠিক কর।যা, ভাগ্
এখন, বিশ্রামের সময় হয়েছে,যদি পারিস তো সামনের জন্মে দেখা করিস।"
ছেলেখেলা
সবটাই ছেলেখেলা! কে
বাঁচাবে আমাদের দুঃখের
দিন আর বেশী দূরে নেই।
মানুষ চেয়ে থাকে আকাশের
দিকে মেছো বেড়াল অথবা
শোকে ভেঙ্গে পড়া পিপুল গাছের
মতো অকর্মিষ্ঠ অতীতের কথা ভেবে,
যেসব রাতে মাংসের ঘুম ভেঙ্গে
নারীরা ও ধাতু ভেদ করে দেবতারা জেগে
উঠত আর শাসক রাজনীতি ভুলে গিয়ে
নমনীয় মুখে অচেনা আলোয় ওদের
সবাইকেই জনতার কাছে নিয়ে এসে
পথেই নামিয়ে আনতো উৎসব,
সেইসব অদ্ভুত সপ্রাণ রাত্রির কথা ভেবে
অন্ধ হয়ে গেছে কত লোক সখেদে
এখন খাবার,জল এসবের প্রতিকূলতা
হিরণ্যের সফলতার মতো মুখর হ'য়ে
উঠেছে ,তাই সবটাই ছেলেখেলা হবে কি!
এরপরও সন্দেহ থাকলে অপরিমেয় ভূমিতে
বিলোল হয়ে যেতে হবে
অবিশ্বাস্য কিছু প্রাকৃতিক নিয়মে ।
চাকা
তোমাদের চাকার কাছে
নেহাতই শিশু আমি,
বিনয়ের, কাঁদনের ,ক্রূরতার
চাকা গড়গড় ক'রে চলে
সুপক্ক হিসেবে; ঘড়ি
যাকে কাল মনে করি,
অঙ্গুলিহেলনে তোলে
গতি ভ্রমরের বিষ ভ'রে
দিতে অথবা চূর্ণ ক'রে
ব্যথা আর আলোর রশ্মি
ঠিকরোতে ক্ষয় করে বহু দিন;
তা যদি না হয় তবে
একটি পলকে পরবর্তী
পাথুরে জমিতে দাগ রেখে
ছোট ছোট ফুল, শিশুদের
প্রিয় ফুলে চুমো খেয়ে
গুঁড়ো করে দিতে প্রচেষ্টা
লাগে নাকি ! অতএব চাদরের ঘুম
ফেলে দিয়ে বড় হীন হয়ে
উঠি তোমাদের চলন্ত চাকার
নীচে ধুলোর কবলে...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন