পূর্বা মুখোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা
ইতিবৃত্ত, ইতিবৃত্ত নয়...
আঁচ
-------
মরা অক্ষরের গায়ে যতটুকু প্রাণ,
ততটুকু প্রেম। আমি আর
ততোধিক নই।
বাতাস ফুরিয়ে গেলে সর্বস্ব সমেত উবে যাব।
ফেলে যাব দুটিমাত্র বই -
'ইতিবৃত্ত'।' ইতিবৃত্ত নয়'।
ওরা কোনও পাঠক পাবে না।
কড়াই
---------
নেভা আগুনের আঁচ গসগসে হয়।
উনুনের দূরছাই জ্বর।
বাবা কি ওষুধ দেবে?রাত্তিরে উনোন ঘুমোবে?
নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবে কয়েকটা বছর?
উনুন না জ্বেলে আমি কোনওদিন লিখতে পারিনি।
পালতেই পারিনি এই সামান্য জীবন !
'এইসব সাময়িক উত্তেজনা ' উনি বলতেন।
উনি, মানে শিয়রে শমন,
আমি যাতে লেখাপত্র সুসিদ্ধ করতাম।
অলীক
-----------
রাত্রি একটার পর ঘড়ির কাঁটারা তীব্র হয়
শ্বাসাঘাত গুণে গুণে লিখি
জল দাও জল দাও জল দাও আমার শেকড়ে...
জানলায় পর্দা ওড়ে, দেয়ালে তেষ্টার ছায়া পড়ে
ঝুরিনামা শায়িত গাছের।
দুহিতা
---------
ধূপছায়া মেয়ে আহা ধূপছায়া মায়ের সন্তান
পিছু পিছু দু পা হাঁটে, দু আঙুলে আঁচল জড়ায়।
'ও কি রে মা ! ভয় পাস ? আয় দেখি, কাছে সরে আয় '
বলে ওর হাত ধরি, কাঁপা কাঁপা
আলেয়ার হাতে
দিয়ে আসি, কবেকার দিকভুলে ভোলা ঠিকানায়
যেখানে বাজিছে বাঁশি, উলুধ্বনি, জুঁইফুলবাস
ভেসে আছে, হাওয়ায় হাওয়ায়...
প্রস্থান
-----------
ছেড়ে যাবো ছেড়ে যাবো ছেড়ে যাবো
ছেড়ে যেতে গিয়ে দেখি ক্ষতমুখে নখ বিঁধে আছে।
উপড়ে নিলে কাষ্ঠল শরীরে রক্ত নেই...
ব্যথা নেই... উপশম নেই... শুধু
কোটরে শিশিরবিন্দু চকচক করে।
দাহ
------
কী করে বাঁঁচবো ওকে ছাড়া !
ও আমার চিরঅন্ধকার।
যতবার জ্বলে উঠি, ও কেমন পেছুপেছু আসে
যেন বুক ফেটে যাচ্ছে তেষ্টায় আবার
যেন স্থির পিপাসার ঠোঁটে
জল নয়, ও চায় আগুন...
অন্ধকার... প্রেমিক আমার !
ক্ষুধা
-------
সেইসব ভয়ংকর রাতে হাওয়া থেমে যেত, পাতা নড়ত না।
বিছানায় মৃতবৎ পড়ে
আমি দেখতাম মাঠে খিদের শেয়ালী
পোড়ামাছ মুখে নিয়ে ঘোরে
জংগলে আওয়াজ উঠতো রাতচরার :
খা খা খা !
কিন্তু না, শেয়ালী খেতো না
পোড়ামাছও ফ্যালফ্যাল মরা চোখে চেয়ে থাকতো
অন্ধকার ঘরের ভেতরে...
জ্বর
-------
জ্বর এসেছিল, ধুম জ্বর।
চিতাবাস, শ্মশানের হাওয়া লেগেছিল।
সে এসেছে পিছুপিছু, বুড়ি শেয়ালীর রূপ ধরে।
সোনার অংগের কালি চেটে খেয়ে যেই সরে গেছে বনঝোপের ভেতরে
জ্বরও নেমে চলে গেল তাপমুখ গুঁজে দিতে আলুথালু নদীর ভেতর...
তেষ্টা আর ফিরল না তারপর।
তেষ্টা নেইই তারপর!
অস্ত
-------
ফিরে আয়
বেলোয়ারি রঙিন খেলার শেষে
পা টিপে পা টিপে
সাবধানে ফিরে আয়।
দ্যাখ কাচ বিছিয়েছে এই শেষবেলা সমস্ত রাস্তায় !
ফিরে আয় ঘরে
এই শান্ত শাদা মেঝের ওপরে,
আলতাছাপে।
ফেরা
---------
একটি অলীকের থেকে অন্যটি যখন দূর, আরও আরও দূরে
উজ্জ্বল দইয়ের ফোঁটা হয়ে লেগে আছে...
গাছে গাছে অপার্থিব নীল থেকে ঝরেছে কাকলি...
বুঝি, শুভকাল এলো। মন চলো অনিকেতে , ইতিবৃত্ত সমাপ্ত এবার।
ওই দূরদেশ, ওই ইতিবৃত্ত নয়…
-------
মরা অক্ষরের গায়ে যতটুকু প্রাণ,
ততটুকু প্রেম। আমি আর
ততোধিক নই।
বাতাস ফুরিয়ে গেলে সর্বস্ব সমেত উবে যাব।
ফেলে যাব দুটিমাত্র বই -
'ইতিবৃত্ত'।' ইতিবৃত্ত নয়'।
ওরা কোনও পাঠক পাবে না।
কড়াই
---------
নেভা আগুনের আঁচ গসগসে হয়।
উনুনের দূরছাই জ্বর।
বাবা কি ওষুধ দেবে?রাত্তিরে উনোন ঘুমোবে?
নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবে কয়েকটা বছর?
উনুন না জ্বেলে আমি কোনওদিন লিখতে পারিনি।
পালতেই পারিনি এই সামান্য জীবন !
'এইসব সাময়িক উত্তেজনা ' উনি বলতেন।
উনি, মানে শিয়রে শমন,
আমি যাতে লেখাপত্র সুসিদ্ধ করতাম।
অলীক
-----------
রাত্রি একটার পর ঘড়ির কাঁটারা তীব্র হয়
শ্বাসাঘাত গুণে গুণে লিখি
জল দাও জল দাও জল দাও আমার শেকড়ে...
জানলায় পর্দা ওড়ে, দেয়ালে তেষ্টার ছায়া পড়ে
ঝুরিনামা শায়িত গাছের।
দুহিতা
---------
ধূপছায়া মেয়ে আহা ধূপছায়া মায়ের সন্তান
পিছু পিছু দু পা হাঁটে, দু আঙুলে আঁচল জড়ায়।
'ও কি রে মা ! ভয় পাস ? আয় দেখি, কাছে সরে আয় '
বলে ওর হাত ধরি, কাঁপা কাঁপা
আলেয়ার হাতে
দিয়ে আসি, কবেকার দিকভুলে ভোলা ঠিকানায়
যেখানে বাজিছে বাঁশি, উলুধ্বনি, জুঁইফুলবাস
ভেসে আছে, হাওয়ায় হাওয়ায়...
প্রস্থান
-----------
ছেড়ে যাবো ছেড়ে যাবো ছেড়ে যাবো
ছেড়ে যেতে গিয়ে দেখি ক্ষতমুখে নখ বিঁধে আছে।
উপড়ে নিলে কাষ্ঠল শরীরে রক্ত নেই...
ব্যথা নেই... উপশম নেই... শুধু
কোটরে শিশিরবিন্দু চকচক করে।
দাহ
------
কী করে বাঁঁচবো ওকে ছাড়া !
ও আমার চিরঅন্ধকার।
যতবার জ্বলে উঠি, ও কেমন পেছুপেছু আসে
যেন বুক ফেটে যাচ্ছে তেষ্টায় আবার
যেন স্থির পিপাসার ঠোঁটে
জল নয়, ও চায় আগুন...
অন্ধকার... প্রেমিক আমার !
ক্ষুধা
-------
সেইসব ভয়ংকর রাতে হাওয়া থেমে যেত, পাতা নড়ত না।
বিছানায় মৃতবৎ পড়ে
আমি দেখতাম মাঠে খিদের শেয়ালী
পোড়ামাছ মুখে নিয়ে ঘোরে
জংগলে আওয়াজ উঠতো রাতচরার :
খা খা খা !
কিন্তু না, শেয়ালী খেতো না
পোড়ামাছও ফ্যালফ্যাল মরা চোখে চেয়ে থাকতো
অন্ধকার ঘরের ভেতরে...
জ্বর
-------
জ্বর এসেছিল, ধুম জ্বর।
চিতাবাস, শ্মশানের হাওয়া লেগেছিল।
সে এসেছে পিছুপিছু, বুড়ি শেয়ালীর রূপ ধরে।
সোনার অংগের কালি চেটে খেয়ে যেই সরে গেছে বনঝোপের ভেতরে
জ্বরও নেমে চলে গেল তাপমুখ গুঁজে দিতে আলুথালু নদীর ভেতর...
তেষ্টা আর ফিরল না তারপর।
তেষ্টা নেইই তারপর!
অস্ত
-------
ফিরে আয়
বেলোয়ারি রঙিন খেলার শেষে
পা টিপে পা টিপে
সাবধানে ফিরে আয়।
দ্যাখ কাচ বিছিয়েছে এই শেষবেলা সমস্ত রাস্তায় !
ফিরে আয় ঘরে
এই শান্ত শাদা মেঝের ওপরে,
আলতাছাপে।
ফেরা
---------
একটি অলীকের থেকে অন্যটি যখন দূর, আরও আরও দূরে
উজ্জ্বল দইয়ের ফোঁটা হয়ে লেগে আছে...
গাছে গাছে অপার্থিব নীল থেকে ঝরেছে কাকলি...
বুঝি, শুভকাল এলো। মন চলো অনিকেতে , ইতিবৃত্ত সমাপ্ত এবার।
ওই দূরদেশ, ওই ইতিবৃত্ত নয়…
অপূর্ব, অপূর্ব। এসব লেখার কোনো তুলনা হয় না। আমি অভিভূত। আমি নতজানু।
উত্তরমুছুনঅপূর্ব, অপূর্ব। এসব লেখার কোনো তুলনা হয় না। আমি অভিভূত। আমি নতজানু।
উত্তরমুছুনঅসামান্য লেখা পূর্বাদি । ধীরে ধীরে সবকটা পড়লাম । একটা অদ্ভুত ঘোর কাজ করছে সবকটা লেখার মধ্যে, অথচ কবিতাগুলো একটা অন্যটার চেয়ে ভিন্ন । খুব সুন্দর ।
উত্তরমুছুন।। শুভদীপ নায়ক ।।
মুগ্ধ হলাম
উত্তরমুছুনমুগ্ধ হলাম
উত্তরমুছুনঅসামান্য সব লেখা। খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন-মণিশংকর বিশ্বাস