সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান




পেত্রার্কের কবিতা
অনুবাদ - সৈয়দ কওসর জামাল


(ইতালিয়ান নাম  ফ্রান্সেস্কো পেত্রার্কা, বিশ্বের কাছে পরিচিত পেত্রার্ক নামে। ইতালীয় এই কবি ও লেখকের জন্ম হয়েছিল ১৩০৪ সালের ১৮ জুলাই। বেঁচে ছিলেন প্রায় সত্তর বছর। পড়াশুনা যদিও আইন নিয়ে, ক্লাসিক সাহিত্যই ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়। তিনিই ইতালিতে মানবতাবাদী দর্শনের উদ্গাতা, আর এই মানবতাবাদের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল রেনেসাঁস যুগ। আজকের বিশ্ব পেত্রার্ককে জানে কবি হিসেবে। বিশেষ করে সনেট রচয়িতা হিসেবে। তাঁর কবিতায় লরার প্রতি প্রেম আদর্শ প্রেমের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে। পেত্রার্কের সনেট সব দেশেই শুধু গৃহীত হয়েছে তাই নয়, তাঁর সনেটের আঙ্গিক অনুসরণযোগ্য হয়েছে।)






















দুটি সনেট

(টমাস ওয়েনয়ার্থ হিগিনসন-এর ইংরেজি অনুবাদ অবলম্বনে)


মধুর বাতাস ঘিরে থাকো সোনালি চুলের গুচ্ছ একরাশ
ভেসে থাকো, ভাঁজে ভাঁজে তাদের সঙ্গেই মিশে থাকো
শোভনসুন্দর হয়ে অতি প্রিয় সোনারং আকাশেই আঁকো
আবার জড়াও তাকে, যে আমার হৃদয়ের প্রিয় অভিলাষ।
তার দুচোখে তোমার দৃষ্টি প্রলম্বিত, যার সৌন্দর্যরতন
আমার হৃদয়ে বেঁধে, হৃদয় নিঃশেষ করে তার বায়ু
যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার সমস্ত ধন হারিয়েছে আয়ু
রাত্রি যাকে বিপর্যস্ত করে যায় ভীত কোনো প্রাণীর মতোন।
মনে হয় আমি তাকে পেয়েছি এবার খুঁজে; অনুভব করি
কতদূরে রয়েছে সে---তুমি এই ওঠো, এই নামো, সর্বক্ষণ
আমি যা চেয়েছি তাও আজ সত্যি হয়ে উঠেছে এবার শোনো;
ওগো, উচ্ছ্বসিত হাওয়া, তোমাকে সমৃদ্ধ করে হর্ষ-আশাবরি
এবার বিশ্রামে যাও, শোকহীন ও উজ্জ্বল  বায়ু-সঞ্চালন
আমি কেন তোমার আহ্বানে সঙ্গে ভেসে যেতে পারি না কখনও?


এই পৃথিবীতে আমি পেয়েছি করুণা ঈশ্বরের, দৈববশে
দেখেছি স্বর্গীয় শোভা, ওপরূপ, সৌন্দর্যের---যা ছিল অচেনা
যার স্মৃতি থেকে শুধু হর্ষ অথবা বিষাদ একাই আসে না
এসেছিল---মেঘ ও স্বপ্নের মধ্যে যারা ছিল অদৃশ্য রভসে।
আমি দেখেছি কীভাবে অশ্রু তার উদ্বেগের চিহ্ন রেখে যায়
ওই চোখের ভিতরে, একদা যা সূর্যকে করেছে অনুজ্জ্বল
শুনেছি দুই ঠোঁটের মৃদু স্বরে উঠে আসা বিলাপ অতল
তাদের নিশ্বাসধ্বনি স্থির পর্বতমালাকে অক্লেশে নাড়ায়।
তাদের শোকচিহ্নের মধ্যে তৈরি হল প্রিয় উচ্চতার স্থান
প্রেম আর জ্ঞান, সাহস ও কোমলতা, সত্যের অভিযোজন
এত মৃদু ধ্বনি তারা কখনও রচেনি নশ্বর মানুষের কানে;
এবং স্বর্গও হয়তো শুনেছিল এ দুঃখের মায়াময় গান
বৃক্ষের শাখায় পাতারাও চেয়েছিল বেদনার প্রশমন
এমন মাধুর্যভরা স্বর্গ-পরিবেশ গড়ি প্রেমের আহ্বানে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দীপঙ্কর বাগচীর কবিতা paul gauguin  ঈশ্বর ও গাধার সংলাপ   সকল কাজের কাজ, ফেলে আসে আমাদের গাধা এ জীবন ঘূর্ণমান, এ জীবন বস্তুতঃই বাধা কে তবে ফিরেছে দূরে, সন্ধ্যা সূর্যে এতো রঙ করা বিষাক্ত বীজের ক্ষেত ছুঁয়ে আছে যেভাবে পাহারা এই রাত্রি নমাজের, এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু, আছে নাকি দিনের অদূরে মানুষের মতো ঠোঁট, মানুষের মতো কেউ বসে আমার সমস্তবেলা কেটে যায় কীসের আবেশে ঋতুও যখন আসে ধস্ত হয়ে বিকারের প্রায় দূরে দূরে জ্বলে তারা, বালিকারা কোথায় হারায় দিনের ভিতরে দিন ডুবে গেলে গোলার্ধের পরে কে তবে এসেছ এই রাত্রিদিন এমন আষাঢ়ে এই রাত্রি নমাজের এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু আছে নাকি দিনের অদূরে বাতাস কচুরিপানার দেশে, এসে গেছি অবশেষে ভাঙা বাড়িটার আলো বলেছিলে সব ভালো কোন পথে তোমাকে হারাই  আমার তো কিছু নাই , অন্ধকার বনে তাই একা একা ঘুরে গেছি সব কিছু মিছি মিছি বাতাসের দোলা লেগে ,এসেছে সবাই যতো ভাবি এলোমেলো ,কুয়াশায় কারা এলো ঝোড়ো হাওয়া বুকে নিয়ে এপাড়া ওপাড়া দিয়ে উড়ে যায় টিন ছাদ ,দেখো সাঁই সাঁই তুমি বলেছ...
অরিত্র সান্যালের গুচ্ছ কবিতা  কয়েকটি লেখা                                 [ যা আমি গিলে খেয়েছি এতকাল প্রতিটি নিরুদ্দেশের অন্ধকার আমার মধ্যে আজ অনর্গল উসখুস করে কালো কালি ] ১। গর্ত থেকে পতন উপচে পড়ছে আমার বিশাল সব জাহাজ একে একে শূন্যতা গেঁজিয়ে ভেসে ওঠে মণি ঘিরে এক বন্ধ মাল্লা আমার আমার চারিদিক সম্পূর্ণ নয় এখনও ২। চার পাঁচটা অসম্পূর্ণ বাক্যের মধ্যে আছি এখন সে সব থেকে সুতো বেরিয়ে আছে হাওয়া নাড়ায় তাদের একটা পর্দা যেভাবে আমাদের ঘিরে রাখে বাইরে অনাদি শীতল কাল ৩। একটি প্রশ্নচিহ্নের আঁকশি নেমে আসে কে কে ফিরে যেতে চাও ফেলে আসা মাধ্যাকর্ষণে? খাদ থেকে এখন আমার স্বর হাউই ছুঁড়ল একটি- তারপর? জীবন অনন্ত শূন্যতায় উদ্ধৃত ৪। আমার পিছনে এখন তুমি এসে বসেছ-  শান্ত নিস্পন্দ ঝরে যাওয়া এখন শুধুই যতটুকু বয়ে নিয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস আমি তোমার না-লেখার ...
অনুবাদ কবিতা কবীরের কবিতা অনুবাদ – চৈতালী চট্টোপাধ্যায়  চৈতালীর কবীর ১ মন তো অসাধু ব্যবসায়ী। তাতে লগ্ন হয়ে আছে এক কুটিলা পত্নী আর পাঁচ-পাঁচটি বেয়াড়া সন্তান! মন,ফিরবে না। বলছে কবীর, মনে ভারী শক্ত গিঁট পড়ে গেলে, সহজে খোলে না ২ কোরানে কিংবা বেদে, এ-শিক্ষা কোথাও নেই! লাগাম লাগিয়ে মুখে, পিঠে জিন পরাও, রেকাবে পা দাও। তারপর চলা-মন, তারপর পথ,নির্জন, সোজা স্বর্গে গেছে ৩ লোভ যেন ঢেউয়ের মতো। তোমাকে ডোবাতে কিছু জল লাগে না! রাজসিংহাসনে রাজা। রানী, রূপবতী। পূজারী পণ্ডিত, কিংবা ভেল্কি-দেখানো এক যোগী। নির্জলা সমুদ্রটিতে সব ডুবে গেলো! তবে,কে জীবিত? যার মন শিলায় গ্রস্ত, কবীর জানালো ৪ তীরে বসে থাকি। নৌকো আসবে। কোথায় যাচ্ছি? স্বর্গ আদৌ আছে নাকি! ওহে নয়নপথগামি! তোমাকে সর্বত্র দেখি আমি। কবীর মিনতি করে, এ-যাত্রা দাও রেহাই! আছি বেশ, এখানেই তো আমার ঠাঁই ( কবীর অনুবাদ করেছি বটে, কিন্তু সেই আধ্যাত্মিকতা বোঝার সাধ্য আমার নেই। সেই সময়ের ভক্তি ...