সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান







শোভন ভট্টাচার্যের কবিতা 




ছবিঃ সূর্যকান্ত পাঠক 












 অতিমারী



সন্তানই ধর্ষক হলে নাভীশ্বাস ওঠে প্রকৃতির;

বিষে বিষে ছটফটায় ক্ষিতি অপ তেজ মরুত ব্যোম।

সেদিকে দ্যাখে না ফিরে সভ্যতার উদ্ধত অহম;

মানুষই নিয়ন্তা যেন বিশ্বজোড়া গতি ও স্থিতির।


ভুলে যায় তার জন্ম এই প্রকৃতিরই ছায়াতলে।

সেই শান্তি, সে-আশ্রয় কী নিবিড় মাতৃস্নেহবৎ

ভুলে গিয়ে ভাবে মূঢ় মহাবিশ্বে মানুষই মহৎ;

লুন্ঠনের থাবা তার পড়ে জলেস্থলে ফুলেফলে।


মাটি ফালাফালা হয়, ছিন্নভিন্ন আকাশ-বাতাস।

কান্না ওঠে—  সে কান্নাও কোলাহলে চাপা পড়ে যায়;

সেই অশ্রু সুনামির ঢেউ হয়ে পৃথিবী ভাসায়;

সেই অশ্রু জন্ম দেয় সংক্রামক মারণ ভাইরাস।


সারা বিশ্ব লকডাউন, মৃত্যু বেড়ে নব্বই হাজার...

দুনিয়া উজাড় করে পথ খোঁজে প্রকৃতি বাঁচার।








ঋতু-পর্ণমোচী



নিঃশেষে ঝরাও পাতা, দেখেছি চৈত্রের মাঝামাঝি।

পর্ণমোচী সভ্যতার নশ্বর জীবনধর্ম মেনে

কত লোক ঝরে গেল ইতালি আমেরিকায় স্পেনে…

‘অসভ্য’ তৃতীয় বিশ্বে আমরা তো নেহাত মশামাছি।


তুমি দয়ামায়াহীন এত নির্বিকার থাকতে পারো !

ঝরে যাওয়া পাতাদের স্মৃতি মনে পড়ে না তোমার !

শোনো, হাহাকার ওঠে চারিদিকে ঝরা-সভ্যতার;

অথচ তোমার দেখি স্বপ্ন জাগে শিয়রে আবারও !


রোঁয়া জাগে যেরকম সদ্যজাত পাখির ছানার

শরীরে— তোমার দেহ ক্রমশ উন্মুখ হয়ে ওঠে

আলো-বাতাসের দিকে— স্বপ্ন পায় সুষুপ্ত ডানার।


ডালপালা তোমার দেখি নব্য-কিশলয়ে ভরে যায়।

প্রাণের এ কোন লীলা সভ্যতার চরম সংকটে?

এই ঋতু-পর্ণমোচী কোন সূত্র মানুষকে শেখায়? 






ছবিঃ উইলিয়াম ব্লেক 







শিশুটি ও ছাদের আকাশ



শিশুটি এমন করে বাবা-মাকে পায়নি যেন আর।

মাটিতে মড়ক তাই তারা আজ ছাদে উঠে এল;

দুজনকে দুপাশে নিয়ে শিশুটি আকাশ খুঁজে পেল;

খুঁজে পেল ছায়াপথে পায়চারির আলো অন্ধকার।


সন্ধ্যায় রেওয়াজ, পড়া, প্রাত্যহিক প্রস্তুতি কঠিন;

বাবা তার বিজ্ঞাপনে কপি লেখে, মা তার এনজিও;

বাড়ি ফিরতে রাত হয় দুজনেরই— শিশুটির প্রিয়

সেতার, ড্রয়িং খাতা, জানে তার ব্যথা সঙ্গহীন।


পৃথিবী সচল থাকলে, ছাদে তার ওঠাই হতো না;

জানাই হতো না তার আকাশের বুকে ছাদ ভাসে;

কত আলোকবর্ষ দূর থেকে জীবনের আলো আসে

নেহাত গল্পের ছলে কখনো হতো না তার শোনা—


গোনাই হতো না তার, কত তারা আকাশের গা’য়… 

ঘুমের ওপরে তার প্রতিরাতে কত ফুল ফোটায়।  

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দীপঙ্কর বাগচীর কবিতা paul gauguin  ঈশ্বর ও গাধার সংলাপ   সকল কাজের কাজ, ফেলে আসে আমাদের গাধা এ জীবন ঘূর্ণমান, এ জীবন বস্তুতঃই বাধা কে তবে ফিরেছে দূরে, সন্ধ্যা সূর্যে এতো রঙ করা বিষাক্ত বীজের ক্ষেত ছুঁয়ে আছে যেভাবে পাহারা এই রাত্রি নমাজের, এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু, আছে নাকি দিনের অদূরে মানুষের মতো ঠোঁট, মানুষের মতো কেউ বসে আমার সমস্তবেলা কেটে যায় কীসের আবেশে ঋতুও যখন আসে ধস্ত হয়ে বিকারের প্রায় দূরে দূরে জ্বলে তারা, বালিকারা কোথায় হারায় দিনের ভিতরে দিন ডুবে গেলে গোলার্ধের পরে কে তবে এসেছ এই রাত্রিদিন এমন আষাঢ়ে এই রাত্রি নমাজের এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু আছে নাকি দিনের অদূরে বাতাস কচুরিপানার দেশে, এসে গেছি অবশেষে ভাঙা বাড়িটার আলো বলেছিলে সব ভালো কোন পথে তোমাকে হারাই  আমার তো কিছু নাই , অন্ধকার বনে তাই একা একা ঘুরে গেছি সব কিছু মিছি মিছি বাতাসের দোলা লেগে ,এসেছে সবাই যতো ভাবি এলোমেলো ,কুয়াশায় কারা এলো ঝোড়ো হাওয়া বুকে নিয়ে এপাড়া ওপাড়া দিয়ে উড়ে যায় টিন ছাদ ,দেখো সাঁই সাঁই তুমি বলেছ...
অরিত্র সান্যালের গুচ্ছ কবিতা  কয়েকটি লেখা                                 [ যা আমি গিলে খেয়েছি এতকাল প্রতিটি নিরুদ্দেশের অন্ধকার আমার মধ্যে আজ অনর্গল উসখুস করে কালো কালি ] ১। গর্ত থেকে পতন উপচে পড়ছে আমার বিশাল সব জাহাজ একে একে শূন্যতা গেঁজিয়ে ভেসে ওঠে মণি ঘিরে এক বন্ধ মাল্লা আমার আমার চারিদিক সম্পূর্ণ নয় এখনও ২। চার পাঁচটা অসম্পূর্ণ বাক্যের মধ্যে আছি এখন সে সব থেকে সুতো বেরিয়ে আছে হাওয়া নাড়ায় তাদের একটা পর্দা যেভাবে আমাদের ঘিরে রাখে বাইরে অনাদি শীতল কাল ৩। একটি প্রশ্নচিহ্নের আঁকশি নেমে আসে কে কে ফিরে যেতে চাও ফেলে আসা মাধ্যাকর্ষণে? খাদ থেকে এখন আমার স্বর হাউই ছুঁড়ল একটি- তারপর? জীবন অনন্ত শূন্যতায় উদ্ধৃত ৪। আমার পিছনে এখন তুমি এসে বসেছ-  শান্ত নিস্পন্দ ঝরে যাওয়া এখন শুধুই যতটুকু বয়ে নিয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস আমি তোমার না-লেখার ...
অনুবাদ কবিতা কবীরের কবিতা অনুবাদ – চৈতালী চট্টোপাধ্যায়  চৈতালীর কবীর ১ মন তো অসাধু ব্যবসায়ী। তাতে লগ্ন হয়ে আছে এক কুটিলা পত্নী আর পাঁচ-পাঁচটি বেয়াড়া সন্তান! মন,ফিরবে না। বলছে কবীর, মনে ভারী শক্ত গিঁট পড়ে গেলে, সহজে খোলে না ২ কোরানে কিংবা বেদে, এ-শিক্ষা কোথাও নেই! লাগাম লাগিয়ে মুখে, পিঠে জিন পরাও, রেকাবে পা দাও। তারপর চলা-মন, তারপর পথ,নির্জন, সোজা স্বর্গে গেছে ৩ লোভ যেন ঢেউয়ের মতো। তোমাকে ডোবাতে কিছু জল লাগে না! রাজসিংহাসনে রাজা। রানী, রূপবতী। পূজারী পণ্ডিত, কিংবা ভেল্কি-দেখানো এক যোগী। নির্জলা সমুদ্রটিতে সব ডুবে গেলো! তবে,কে জীবিত? যার মন শিলায় গ্রস্ত, কবীর জানালো ৪ তীরে বসে থাকি। নৌকো আসবে। কোথায় যাচ্ছি? স্বর্গ আদৌ আছে নাকি! ওহে নয়নপথগামি! তোমাকে সর্বত্র দেখি আমি। কবীর মিনতি করে, এ-যাত্রা দাও রেহাই! আছি বেশ, এখানেই তো আমার ঠাঁই ( কবীর অনুবাদ করেছি বটে, কিন্তু সেই আধ্যাত্মিকতা বোঝার সাধ্য আমার নেই। সেই সময়ের ভক্তি ...