সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান




প্রতীক ঘোষের কবিতা 












ছবিঃ যোগেন চৌধুরী 






রাই-বিরহকথা ১

শুনো ব্রজবালিকা
গাঁথি কুসুমমালিকা
কেন যাও ফিরে ফিরে
বরষণ দিন মেঘ আসে ঘিরে
বিরহ দিবস কাটে না যাম,
পশু-পক্ষীকুল সকলে আসে ফিরে
কেন আসে না ঘনশ্যাম...

এখন নিঃস্পন্দ রাত থেকে নিঃস্পন্দ রাত নেমে আসে নিঃসাড়ে। এখন দেখি যমুনায় গভীর রাতে রাজহাঁসের পালকের মতো মসৃণ জ্যোৎস্না জল থেকে ফেনা উঠে আসে। আমি সেই ফেলে আসা মোহন-বাঁশি যে তোমাদের এমন রাতেই বহুবার ডেকে এনেছি। দেখেছি মেঘের মতো রঙিন চেলি-কাপড়ের উড়ে আসা। মখমলের ভিতর কেমন নিস্পন্দ মাংস আর আদিম গোপন ইশারা।  সেসব কান্না-জল আমি গোপনে গিলে নিয়েছি। উষ্ণ কপালে হাত রেখে দেখেছি আমার কররেখা মিলিয়ে গেছে। এখন এভাবেই রাত্রি পালটে পালটে যাবে। নদী থেকে উঠে আসবে লালা-ঝরানো গোসাপ আর ফুলে ওঠা মৃতদেহ। কদমবনে ভেসে বেড়াবে মৎস্যগন্ধ।



পার্সোনা

ব্যথার সমাস নেই
বরং বিপ্রতীপে হাহাকার আছে

তোমার শরীরে হাত রেখেছি
শুনেছি কান্নার গাঢ় পতনশব্দ
কতো সান্দ্র উষ্ণতা
তোমার শরীর থেকে আমার হাত
শুষে নিয়েছে।
চেরি ফলের মতো লাল উল্লাস
স্পন্দহীন মাংসের রাত
এসব ছেড়ে এখন এসো
এসো আলোঅন্ধকারে, এসো অলিন্দদুয়ারে
এসো আমরা বরং নগ্ন হাত পায়ে
নোনাজলে পায়ের পাতা ভিজিয়ে নিই খানিক...


ঝাউবনের ওই মসৃণ রোদ একদিন বলে দেবে
আমাদের সম্পর্কের তাপ কতোখানি নিবিড়



হোটেল ক্যালিফোর্ণিয়া

অন্ধকার টানেল আর ক্যাকটাসের জঙ্গল – এই তো আমার জীবন। এর বেশি তো আমি চাইনি ডিয়ার গড। তবে কেন দিগন্তে প্রচ্ছন্ন আলো...ঠোঁটে ঠোঁট অবিরল চুমুর ভিতর কেন আস্তিনে লুকোনো ছুরি। এই প্রশস্ত নীরবতা আর খুন জখমের মধ্যে এক মাকড়সা বাসা বাঁধে আর তোমাকে আমাকে কুরে কুরে খায়। কঙ্কাল প্রতিবিম্ব দেখি। প্রেমিকের হাতে বেশ্যার দালালের গন্ধ আর ঝাঁঝালো মদের বিনিময়। মাস্টারবেশনের মতো তেলতেলে এই শহরে আমি সেই জংলি প্রজাপতি। মাঝে মাঝে মাকড়সার জালে আটকে বুঝেছি সেখানে প্রেমিকার বুকের গন্ধ লেগে আছে।


রাই-বিরহকথা ২

না পাওয়ার মধ্যে কি অমোঘ শীতলতা আছে
পেয়ারার নরম মাংসের ভিতর বীজের মতো ফোটে

যেন বা জল... ভঙ্গুর রমণীর বুকে
শীত নেমে আসে গোবর্ধন থেকে
যূথিকা-পুষ্পে ভ্রমরের গান এক অশ্লীল উল্লাস
এসবের মধ্যে এক ভারি গোসাপ
                  জলের সর কেটে ভেসে যায় আর
জিভ থেকে হাওয়া চেটে মেপে নেয় অন্ধকারের গভীরতা
হে রাইকিশোরী... তুমিও বুকের শীতলতায় হাত রেখে দেখ
বিরহের ভিতরে কতোটা গাঢ় নৈঃশব্দ আছে





নকিং অন হেভেনস্‌ ডোর

এই অসহ্য জ্বালা আর নেওয়া যায় না মা
হাড় মাংসের ভিতর এই প্রবল বিরোধিতা
পাঁজরের ভিতরে রক্ত পড়ে...

আমি চিতাকাঠের ফাঁক থেকে মুখ তুলে দেখি
কৃষ্ণা-দ্বাদশীর আলোয় কতো অসংখ্য শেয়াল
সে সব জমে থাকা রক্ত চেটে খাচ্ছে
কে তুমি খুনি
কে তুমি এতো হননরক্ত রাষ্ট্রের পা চেটে খাচ্ছো
কৃত্রিম সাপের চেরা জিভ থেকে বিষ ঝরে
কোমল জানাজার পাশে তার বিষের থলি পড়ে আছে
এই সন্ধ্যাই এই বছরের শেষ...
নিষ্প্রভ ব্রহ্মাণ্ডের পেটে আমার সাজানো চিতাকাঠ
আর পাঁজরের খাঁচায় এসে জমে
শতাব্দীর শেষ প্রজাপতির ছেঁড়া ডানা

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দীপঙ্কর বাগচীর কবিতা paul gauguin  ঈশ্বর ও গাধার সংলাপ   সকল কাজের কাজ, ফেলে আসে আমাদের গাধা এ জীবন ঘূর্ণমান, এ জীবন বস্তুতঃই বাধা কে তবে ফিরেছে দূরে, সন্ধ্যা সূর্যে এতো রঙ করা বিষাক্ত বীজের ক্ষেত ছুঁয়ে আছে যেভাবে পাহারা এই রাত্রি নমাজের, এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু, আছে নাকি দিনের অদূরে মানুষের মতো ঠোঁট, মানুষের মতো কেউ বসে আমার সমস্তবেলা কেটে যায় কীসের আবেশে ঋতুও যখন আসে ধস্ত হয়ে বিকারের প্রায় দূরে দূরে জ্বলে তারা, বালিকারা কোথায় হারায় দিনের ভিতরে দিন ডুবে গেলে গোলার্ধের পরে কে তবে এসেছ এই রাত্রিদিন এমন আষাঢ়ে এই রাত্রি নমাজের এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু আছে নাকি দিনের অদূরে বাতাস কচুরিপানার দেশে, এসে গেছি অবশেষে ভাঙা বাড়িটার আলো বলেছিলে সব ভালো কোন পথে তোমাকে হারাই  আমার তো কিছু নাই , অন্ধকার বনে তাই একা একা ঘুরে গেছি সব কিছু মিছি মিছি বাতাসের দোলা লেগে ,এসেছে সবাই যতো ভাবি এলোমেলো ,কুয়াশায় কারা এলো ঝোড়ো হাওয়া বুকে নিয়ে এপাড়া ওপাড়া দিয়ে উড়ে যায় টিন ছাদ ,দেখো সাঁই সাঁই তুমি বলেছ...
অরিত্র সান্যালের গুচ্ছ কবিতা  কয়েকটি লেখা                                 [ যা আমি গিলে খেয়েছি এতকাল প্রতিটি নিরুদ্দেশের অন্ধকার আমার মধ্যে আজ অনর্গল উসখুস করে কালো কালি ] ১। গর্ত থেকে পতন উপচে পড়ছে আমার বিশাল সব জাহাজ একে একে শূন্যতা গেঁজিয়ে ভেসে ওঠে মণি ঘিরে এক বন্ধ মাল্লা আমার আমার চারিদিক সম্পূর্ণ নয় এখনও ২। চার পাঁচটা অসম্পূর্ণ বাক্যের মধ্যে আছি এখন সে সব থেকে সুতো বেরিয়ে আছে হাওয়া নাড়ায় তাদের একটা পর্দা যেভাবে আমাদের ঘিরে রাখে বাইরে অনাদি শীতল কাল ৩। একটি প্রশ্নচিহ্নের আঁকশি নেমে আসে কে কে ফিরে যেতে চাও ফেলে আসা মাধ্যাকর্ষণে? খাদ থেকে এখন আমার স্বর হাউই ছুঁড়ল একটি- তারপর? জীবন অনন্ত শূন্যতায় উদ্ধৃত ৪। আমার পিছনে এখন তুমি এসে বসেছ-  শান্ত নিস্পন্দ ঝরে যাওয়া এখন শুধুই যতটুকু বয়ে নিয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস আমি তোমার না-লেখার ...
অনুবাদ কবিতা কবীরের কবিতা অনুবাদ – চৈতালী চট্টোপাধ্যায়  চৈতালীর কবীর ১ মন তো অসাধু ব্যবসায়ী। তাতে লগ্ন হয়ে আছে এক কুটিলা পত্নী আর পাঁচ-পাঁচটি বেয়াড়া সন্তান! মন,ফিরবে না। বলছে কবীর, মনে ভারী শক্ত গিঁট পড়ে গেলে, সহজে খোলে না ২ কোরানে কিংবা বেদে, এ-শিক্ষা কোথাও নেই! লাগাম লাগিয়ে মুখে, পিঠে জিন পরাও, রেকাবে পা দাও। তারপর চলা-মন, তারপর পথ,নির্জন, সোজা স্বর্গে গেছে ৩ লোভ যেন ঢেউয়ের মতো। তোমাকে ডোবাতে কিছু জল লাগে না! রাজসিংহাসনে রাজা। রানী, রূপবতী। পূজারী পণ্ডিত, কিংবা ভেল্কি-দেখানো এক যোগী। নির্জলা সমুদ্রটিতে সব ডুবে গেলো! তবে,কে জীবিত? যার মন শিলায় গ্রস্ত, কবীর জানালো ৪ তীরে বসে থাকি। নৌকো আসবে। কোথায় যাচ্ছি? স্বর্গ আদৌ আছে নাকি! ওহে নয়নপথগামি! তোমাকে সর্বত্র দেখি আমি। কবীর মিনতি করে, এ-যাত্রা দাও রেহাই! আছি বেশ, এখানেই তো আমার ঠাঁই ( কবীর অনুবাদ করেছি বটে, কিন্তু সেই আধ্যাত্মিকতা বোঝার সাধ্য আমার নেই। সেই সময়ের ভক্তি ...