সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

এপ্রিল, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে
ঋণ স্বীকার ও ব্লগজিনের সদস্য বন্ধুরা দীপঙ্কর বাগচী, প্রসূন মজুমদার, আনন্দী চট্টোপাধ্যায়, সৌভিক বসু ও অর্ণব চৌধুরী                  
সম্পাদকের কলমে ক্যালেন্ডারে গীষ্মকাল হলেও এখন আকাশে আর তেমন প্রখরতা দেখা যাচ্ছে না। যেন এই অতিমারী সংশয়ের ভিতরে এ-সমাজের এক শ্রেণীর দুর্দশার আক্ষেপ কিছুতেই ঘোচাতে পারছে না প্রাচ্যের আকাশ। সুবিধাভোগী মানুষের উৎপাত এপ্রকৃতি যেন কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছে না, ক্রমশ ফুঁপিয়ে উঠছে আরও। দেশ-রাজনীতি আর বুর্জোয়ার দালালরা এখনো যে যার মুনাফা অর্জনের প্রচেষ্টায় আছে। এমনকি স্থূল মানবিকতা দিয়ে সামাজিক ভাবে মহান হতে চাওয়া একদল কবি-সাহিত্যিকেরাও এরই মধ্যে বিপণি হয়ে উঠতে চায়। তাদের প্রশ্ন নেই, অথচ তারা স্পষ্ট করে ভাবেন যে তারা এই সভ্যতার এক অনিবার্য সৃষ্টি। আজ মঙ্গলবার আকাশে ফের পাখির ওড়াউড়ি। এইসবের ভিতরেই তারা গান গাইছে। অসংখ্য বোবা মানুষের হয়ে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কী যেন গেয়েই চলেছে...               
প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা   ছবিঃ অর্পণ বসু  অনিবার্য যৌন শালপাতা    (প্রজিত-কে )  ১ ভাঁড়ুদাস, পথে চলো  শ’য়ে শ’য়ে ফুটে আছে পাছার বিপণী  তুমি আর কারও কথা শুনোনাকো জাঙিয়ার কথা শোন  কেন সে অযথা ভিড়ে  একা কষ্ট পায়  আস্ফালন নাই তার  নাই তার স্ফুরিত সময়  তুমিও তো দল পিছু  পিছু পিছু  হেঁটেছো সরণী  ন্যুব্জ পিঠের ঘাম ভিজিয়েছে কক্‌সিক্স  তুমিও তো বাঁকা চোখে দেখেছো ভার্জিন  কিভাবে ফুঁকছে সিগারেট  তোমাকে দেয়নি ভাগ  তাই কি তোমার রাগ  পোশাকের মেধা থেকে ঝরেছে বাজার  রোদ ছিলো --সরে গেছে  আভা ছিলো -- মরে গেছে  সানস্ক্রিন ছাতামাথা  ছাঁট সম্বল  ভাঁড়ুদাস, পথে এসো  মাইরি তোমার থেকে বড়ো কোন  চারপেয়ে নেই  কি কথা আলোর সাথে ? আলেয়ার ?  সময়ের থেকে বিষ   গড়িয়ার ঠেকে হিসি  ছড়িয়েছে  ব্লার্ব ও কভার ড্রিবলিং  দেখো যেন গোল করোনাকও,  থ্রু-পাস এমন দাও  যে ধরবে সে অফ্‌-সাইড খাবে   গরল অমৃত হলে  আমেরিকা গোর দেবে অস্ত্রভাঁড়ার  কোজাগরে অজগর চাঁদ গিলে নেবে  ২ দিব্য যখন মারা যায়  বাথরুমে জল পড়ছিলো।  মিহির মরার সময় সদ্য কাচা রুমালে বেঁধে রেখেছিল  খুচরো পয়সা
হীরক রায়চৌধুরীর কবিতা   ছবিঃ কবি গাব্রিয়েলে তিন্তি (ইতালী) কম্বিনেশন গভীর অরণ্য থেকে খুঁজে পাই তার মুখ,অনুশাসনের  খোলসটুকু তুলে ফেললে দেখা যায় চামড়ায় তার দাগ কেটে ব'সে গেছে, কব্জিতে ঘড়ির ব্যান্ডের  ছাপ যেমন ব'সে যায় ,আন্তরিকতার তেল জল পড়েনি  সেখানে বহুদিন;বহির্বিশ্ব কিন্তু বহুদিন পর রোদে বেড়াতে বেরিয়ে ঝলমলে,হাসিখুশি ! দেখা যাক,আমি,সে আর অরণ্যের বাইরে যা কিছু আছে স্বাস্থ্যকর সব মিলিয়ে একটা ভরপুর কম্বিনেশন তৈরী হয় কিনা!             কেঁদেই চলে গীটার Commemorating The Beatles(Specially to the Song "While my guitar gently weeps".) কীসের পরে কী সাজাচ্ছি! নদীর পরে দেশ! গীটার শুনে বুনছি মনে  অ্যালকোহলের রেশ। হ্যারিসন আর পল কে দেখো নাচছে কেমন ভাই, গীটারটাকে এইবারই তো কাঁদিয়ে নেওয়া চাই! মেঝের ওপর ময়লা জমা মুছতে হবে ক'ষে, এরিকটা তাই ঘষছে গীটার  ভদ্রলোকের রোষে। ভালোবাসার কথা যখন উঠছে তারের মাথায়,  জর্জ তখনই পাচ্ছে ব্যথা  কেনা বেচার খাতায়।
জিয়া হকের কবিতা                        ছবিঃ ফেসবুুক অপচিন্তা ওখানে কচুগাছ ছিল তখন। ওখানে মুক্তা পাওয়া যেত।আমি তো পেয়েছি। তুমি পাবে না কেন? তুমি তো পাপ করোনি। আমার যেমন কোনও পাপ নেই, তবে পাপবোধ আছে।আমি এখন আর লিখতে পারছি না। এর কারণ, আমি চিন্তা করতে পারছি না। অতীত একটা ক্রমে সাজানো থাকে স্মৃতিতে। সেই জন্য আমরা বলতে পারি কোন ঘটনার পরে কোন ঘটনা ঘটেছে। সেই স্মৃতি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়লে তা থেকে ঘটনা উদ্ধার করা শক্ত। যেভাবে আমি আপাতত উদ্ধার করতে পারছি না। হয়ত পরে পারব। নিশ্চিত নই, নিশ্চিন্ত নই। কেন চিন্তা করতে পারছি না, এই নিয়েই এখন আমার দুশ্চিন্তা। আমার সমস্যা আমি কাউকে বলতে পারি না পাছে লোকে আমাকে অস্বাভাবিক ভাবে। এই সমাজকে ছোটবেলা থেকেই ভয় পাই, তারপরও যেখানে যাই সেখানে গিয়ে দেখি সেখানেও একটা সমাজ আছে। আমি সমাজকে ত্যাগ করলেও সমাজ আমাকে ত্যাগ করে না। এর মানে এই নয় যে সমাজ কত উদার, কত মহান, কত গ্রহিষ্ণু। এর মানে হল সমাজ এমন একটা পেট যার সব সময় খাদ্য দরকার।আমি সমাজকে পরিপাক করতে পারি না,সমাজই আমাকে পরিপাক করে ছিবড়ে করে ফেলে। এবার ভাবতে বসি, সমাজ
অভিষেক মুখোপাধ্যায়ের কবিতা                     ছবিঃ গুগুল ঘন সন্নিবদ্ধ বস্তি থেকে ১ আরজন্মে শিরদাঁড়া- রাত্রিহীন হিলহিলে সহজাবরণ ছেদ করো তেত্রিশ সুবর্নগরল চেরাজিভ। উচাটনে লাথি মারছে, মাতাল ত্রিকালশম্ভু শিব বাঁকানো অস্তিত্ব, ঝোলা চামড়ার পরতে পরতে কাঁটাতার বিতর্কিত জিন ভেদনের দীর্ঘস্বপ্নে দামামা বাজাল রাষ্পুটিন। অনুচ্চার বিদ্যুৎ ঝলকাল চলাচলে কিভাবে পেরোতে হয় খোঁপাচুল শারদসকালে মানুষ জানেনা। শুধু, মোজাইকে নখ আঁচড়ায়। একখন্ড লতালতা, দেশ তাকে টেনে নিয়ে যায়। ২ সারিবদ্ধ ঘামগন্ধ সানানো ব-দ্বীপ হাঁড়িকাঠে ছাগমুন্ড হাঁ করে আছে শিয়রে টাটানো খাঁড়া, জবাফুল হাল্লা বোল রব ছোঁয়াচে ছোঁয়াচে অগ্নি, ভারি তামাকের ধোঁয়া নিভন্ত প্রদীপ যার নীচে- ইদানিং ফিল্টার ফেটে ফেটে ধাত্রী ফুঁড়ে বুড়ো হয় দেউটির শব রেলিং লোহার সুতো, সরোদের রসনাতন্ত্রের তাথৈ মারণমন্ত্র, ঝড় আনে ঝাকুনিও আনে ইন্দ্রিয় সাঁতার কাটে হরকার বানে তখন আঠালো লাগে, গ্রামছাড়া ঘাড়-এ-গর্দান অলৌকিক চতুর্ভুজ বিশ্বকেশ শোনায় আজান। ৩ এক জলপ্রবাহ চিৎকার ভেতরে ডুমুরবুড়ি ফোটে কী নির্বাণ জন্মান্তর তার, গলা টি
অর্ণব চৌধুরীর কবিতা                    ছবিঃঃ আনন্দী চট্টোপাধ্যায়       ধূর্ত  সে জানে না,  কীভাবে যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রাষ্ট্রের ভাষায় কথা বলে.. কথা বলে, বলে চলে এভাবে কাকের বাসা ভেঙে, কারা যেন রেখে যায় আধপোড়া স্বপ্নগুলি তার সে জানে না– কুয়াশার মতো কেন কেঁপে ওঠে সন্ন্যাসিনী একা নিয়তি সন্ন্যাসের ধুলো ওড়ে তবু কতো কামনার সূতো নিজেকে জড়ায় কতো ভয় ভক্তি নিয়ে মানুষ রয়েছে এই বিনোদনের বহরে অসহায় যতোটা যে ততোটাই উপহাস্য হয়ে ওঠে আজ কতো পরিহাস নিয়ে বেঁচে থাকে নধর যাপন অথচ শহর জুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকের দল হেঁটে যাচ্ছে দিকশূন্যে ভাতের গন্ধের মতো তার রাস্তা চলে গেছে ত্রিভূবণের পারে রোদের প্রখর তেজ আর উদাসীন হাওয়া শুধু যাচ্ছে পিছুপিছু, আদিগন্ত খিদের নেশায় নিশ্চুপ যদিও এখন জানি চুপচাপ ক্ষয়ে যেতে হয় অনুমান, হিংসা, ভয়, যেরকম তোমার দস্তুর আমারও সুখের দিন, সংসারে নশ্বরজন্ম পায় রক্তের ভিতরে তন্ত্র, ফিরে পায় শৈশবের হাসি যদিও এখন জানি, ফিরে আর আসবে না কিছু পাবো না তেমন করে সুখ-দুঃখ, অমৃত ও বিষ যেমন তোমার ওই দিন গুলি আসন্ন উজ্জ্বল আমিও তে
ব্রতীন সরকার'এর চারটি কবিতা                              ছবিঃ গুগুল কাস্তে ইতিমধ্যে শুশ্রূষা বাড়ি ফিরে গেছে, যত কথা জমে ছিল, যত কথা ওষুধ খায়নি নিয়ম করে যত কথা মাঝখানে আড়াআড়ি বিভক্ত তত তুমি পেড়েছ নক্ষত্র, হাতে হাতে সূর্য ডুবে গেছে সব নদী একদিন মিশে যায় তার নিজস্ব ডাঙায় সব বেঁচে থাকা, বাঁচারই প্রয়াসে বিরতির পর তুমি বলছো চাঁদ, আমি শুনছি   কাস্তে।  ধানক্ষেত রাস্তা বন্ধই থাকে, সমুদ্রের দিকে মুখ করে বসি নুন এসে লাগে পরিক্রমায় এটাই ক্লাইম্যাক্স ভাবতে ভাবতেই সমাধিক্ষেত্র ধানক্ষেত বনে যায়। ফসল কর্ষণ আর রোপণের মধ্যে শ্রেণীগত কোনও পার্থক্য যদিও নেই,  যদিও আমরা একসাথে একটা ঘর পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে ফিরে এসেছি ;  ভিতরে একটা গাছ জন্মাচ্ছে,  শিলাবৃষ্টি তার পক্ষে সুখকর নয়। ছোটলোক আয়োজন  আয়োজক ভাগ করে নিচ্ছে দৌরাত্ম্য মন্ডপে মন্ডপে গুম হয়ে যাচ্ছে উপার্জন, ফি-বছর অভ্যাস আর খিদে কোলাকুলি করে বড় হয় কাল রাতে যে   ছোটলোক বিষ খেলো, সে  ব্রাম্মণ  বা কৃষক , কোনটাই নয়। 
আত্মমুকুর   দীপঙ্করবাগচী আমি বিশ্বাস করি ঐতিহ্য বিযুক্ত হয়ে কোনো শিল্প আন্দোলনই তার মূলকে খুঁজে পায় না। সে কারণেই তো বিষ্ণু দে বলেছিলেন 'শিকড়ে' জল সিঞ্চনের কথা। ইয়োরোপীয় কবিতার ক্ষেত্রেও একথা সমভাবে প্রযোজ্য। শিকড়ে জল দান না করলে পরবর্তী বিকাশ মাঝপথে থেমে যেতে বাধ্য। কিন্তু একথাও আমাদের মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতা শিল্পের ইতিহাসে খুঁজতে চাওয়া একটি হাস্যকর প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। ইয়োরোপীয় সাহিত্যে বিশেষত ঔপনিবেশিকতার দৌলতে আমরা প্রথম ভারতীয় তথা বাঙালি নব্য শিক্ষিত মানুষেরা ইংরেজি কাব্য সাহিত্যকেই বুঝেছি। ফলে রোম্যান্টিক শিল্পের ঐতিহ্য আমরা আবিষ্কার করেছিলাম মধ্যযুগের ত্রুবাদুর, প্রভসাঁল কিংবা পরবর্তীকালের প্রি-র‍্যাফেলাইট যুগের বা তার পরবর্তীকালের কাব্য ও চিত্র শিল্পের ভিতরে, এপ্রসঙ্গে মেটাফিসিকাল কবিদের কথা সযত্নে এড়িয়ে গেলেও, আমরা উঠে আসতে দেখব অলিভার গোল্ডস্মিথ, সুইন বার্ণ এবং ঠিক এর পরবর্তী সময়ে অসাধারণ মহৎ ও শ্রেষ্ঠ কবি এবং চিত্রশিল্পী উইলিয়াম ব্লেক কে। সাহিত্যের ইতিহাসকারদের মতে যিনি ইংরেজ রোম্যান্টিক কাব্য আন্দোলনের শ্রেষ্ঠ পঞ্চকদের সব
  সুতপা মুখোপাধ্যায়ের কবিতা দিকভ্রান্ত যা যা বলেছি গোপনে তোমাকে এতদিন সেসব উড়িয়ে দিতে পার তোমার সেগুন বা হরিতকি বনে আমাদের অনামা যাপন থেকে এক টুকরো আগুন দিকভ্রান্ত প্রজাপতির মত হাওয়ার উল্লাসে ভাসতে ভাসতে নদীকে আলোর দিকে নিয়ে যায়, যে আলোর কথায় বৃষ্টি নেমেছিল কয়েক শতক আগে বনের গহীনে শেষবারের মত।    এখনও এখন যেমন বেদনার মুখচাপা কলসিখানি বসিয়ে রেখেছ ঘাটের ধারে , তেমন ঝরে পড়া যূঁইফুলগুলি তোমার শহুরে যাপনের অত্যন্ত অভ্যন্তরে শোভা পাবে এমনই তো ভেবেছিলে তুমি। বিকেলবেলার ব্যস্ত দোকানপাট রাস্তার মোড় সবকিছু নিয়ে ক্লান্ত বেলা ছুটে চলে যায় ধূ ধূ মাঠের দিকে। সেখানে চৈত্রের ধূলোর ঘূর্ণিতে শুকনো পাতা বৃত্তাকারে ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে যেতে পারে স্বর্গেরঠিকানায়। তুমি জানতে— তবুও অভ্যস্ত কলিংবেলের শব্দে তোমার দুকান অযথা উত্যক্ত । বেদনার কলসিখানি এখনও বসে আছে—- বসে থাকবে দীর্ঘদিন। ফুলগুলি শুকিয়ে গেলেও।                           সাদা দেওয়াল আমার আদিগন্ত জুড়ে কলস কলস রোদ্দুর ঢেলে দিচ্ছ তুমি, কেননা কোন এক তীক্ষ্ণ তরবারির মতো রাত্রি এসে ছিন্ন করবে সাদা দেওয়াল, অবেলায় গাঁথা। আশঙ্কা নয়, আপাত ব
সম্পাদকের কলমে, কাল কী খাব জানিনা। শুধু আমি তুমি নই, সকলেই। প্রতিটি দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত আজ করোনাভাইরাসের এই মহামারির পাশাপাশি আরও বেশি শঙ্কিত এই ভেবে যে যদি বেঁচে থাকি, তবে কী খাব? পাশাপাশি উচ্চবিত্তের একটিই অবকাশ তার ভাঁড়ারের সুললিত সৌন্দর্য বৃদ্ধি, তাও আজ রাজনীতি থেকে সমাজনীতিতে কিছুই লুকোনোর নয় । তবু আমরা যারা এই বিচ্ছিন্নতার ভিতরেও স্মরণ করে চলেছি কালের দণ্ডিত নিয়মকে। স্মরণ করে চলেছি আমাদের পাপ-পুণ্য-লোভ-রিরংসা এবং পাশাপাশি আমাদের অন্ধ আনুগত্যের ইতিহাস... আমরা আবার খুঁজে নিতে চাইছি নতুন কোনো স্বপ্নকে।  তাই বিচ্ছিন্নতা যতো জোড়ালো হয়, এই ভাসমান হাওয়ার পাশেই আরও জোটবদ্ধ এক হাওয়া ধীর গতিতে বইতে শুরু করে। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যের সৃষ্টি প্রবন্ধে সে কথাই যেন স্মরণ করেছিলেন, " বিচ্ছিন্নতা হইতে সংশ্লিষ্টতার জন্য আমাদের মনের ভিতরে একটা চেষ্টা যেন লাগিয়া আছে"। শুরু করি, যদি কিছু খুঁজে পাওয়া যায়...                                                      অর্ণব চৌধুরী    
যদি কিছু হ'য়ে পড়ে পাবে শেষে কষ্ট'                                       প্রসূন মজুমদার     কবি তুষার রায়ের নাকি একটা প্রিয় খেলা ছিল চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে টলতে টলতে রাস্তা পার হয়ে যাওয়া। এই খেলার নাম তিনি দিয়েছিলেন 'ডেথ ডেথ খেলা '। তিনি কবি ছিলেন, তাই উন্মাদনা ছিল তাঁর সহজ স্বভাব। কিন্তু মানুষ তো কবি নয়! বিশেষ করে যাকে বলে সভ্য, শিক্ষিত মানুষ!  তারা কীভাবে ডেথ মানে মৃত্যুর সঙ্গে খেলা করবে!  তাই করোনাসুরের আক্রমণ ঠেকাতে মানুষেরা চটপট কিছু হটস্পট খুঁজে নিয়ে আর মুখে মুখোশ গুঁজে নিয়ে স্বেচ্ছায় দেশবিদেশে তালা মেরে দিয়েছে। কেন তালা?  প্রশ্নের উত্তর খুবই সহজ। ' ভাইএর সঙ্গে চিরজীবন  লড়াই করে যাচ্ছি বলে কি ভাইরাসের সঙ্গেও লড়ে যেতে হবে নাকি! আর এ ভাইরাস যা সংক্রামক তাতে মানুষ মানুষের কাছে গেলেই খেল খতম। ভাইরাসের কাজকারবার কীভাবে চলে জানতে চাইলে আপনি টি. ভি - র পর্দায় চোখ রাখুন। সেখানে রাত্রিদিন ভাইরোলজিস্টদের চেনা মুখ। সব চ্যানেলে একই মুখ আর চ্যানেলি ছেনালিও এক। দেখে আপনি যে যে সিদ্ধান্তে আসতে পারেন সেগুলো একটু মেপে নিন দেখি --- ১) ভাইরোলজিস্ট বলে একধরনের জীব
সোহম চক্রবর্তী'র কবিতা বইমেলার পর যে বই হ’ল না পড়া, তুমিও কি রয়ে গেলে তারই কোনও গোপন পাতায়? যেভাবে ঈশ্বরও ঠায় হাপিত্যেশে, কোনও এক চৌরাস্তার মোড়ে আপাতত দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর উশখুশ চাওয়া – বাঁদিক-ডানদিক, মহাকাল মেপে রাখা টাইটান ঘড়ি, অজান্তে জরিপ করছে কোনও এক হতভাগ্য চায়ের দোকান; এসবই সত্য... তবে, তুমিও কি রয়ে গেলে অপঠিত ঈশ্বরের প্রায়? মেলামাঠ ভেঙে গেলে শুধু প্রকাশক গুটিয়ে নিলেন আমাদের নির্বাসিত ধর্ম আর প্রেম-সম্ভাবনা বিরহ তুমি যাও। শতাব্দীপ্রাচীন চাঁদ চেয়ে চেয়ে আমাকে দেখুক... এপারে সুভাষ, ওইদিকে আল মাহমুদ, মাঝখানে পূর্ণচ্ছেদ আর সাতচল্লিশে না-জন্মানো আমি – উদ্বাস্তু জোছনার জল চরাচর ভাসিয়ে দিয়েছে... দশকপারের চিঠি প্রিয়তমা তোমাকেই দিয়ে যাব সব গুরুভার নিঃশ্বাস গাঢ় হ’লে ফিরে আসা সমীচীন নয় হয়তো কথার কথা আর কিছু লেখবারও নেই বাকি সব নীরবতা বেঁধে রাখা ঝুলদড়ি চুপ সহজ সুতোয় গাঁথা আর সব দায়ী আত্মঘাত প্রিয়তমা তোমাকেই দিয়ে যাব দশক পেরোলে
                  ছবি - কে. জি. সুব্রামানিয়াম (source- google)    শমীক সেনগুপ্ত'র কবিতা অপ্রস্তুত খেলাঘর ১ তেঁতুল পাতায় অগণিত কালচক্র জন্ম মৃত্যু খেলা। জলের অভাবে রোদে পুড়ে জরাময়  দেহ নিয়ে জেগে ‌অনন্ত বাগান--- পশ্চিম আকাশে শনের চুলের কারুকাজ জরা ব্যাধি লোলচর্ম নিয়ে অনন্ত বাগানে একা বসে! বয়স চলেছে ক্রমে বেড়ে নিয়তি শোকের আলো ক্ষিদে গ্ৰাস করে জন্ম-জন্মান্তর বহুবার শোক ভুলে গিয়ে তেঁতুল পাতায় জাগে আলো কালের নাচন..... শনের চুলেরা চাঁদে ক্ষত ভারতবর্ষের দুটো বুকে তেঁতুল পাতায় পোড়ে শোক কালচক্র জন্ম মৃত্যু খেলা! চন্দনে মধুতে ঘৃতে পুষ্পে দেহ পোড়ে ডোমের সম্মুখে বৃহৎ তালুতে তার ধরা- গতজন্ম ক্রোধ শোক আলো। ২ মরণের পরে মৃত্যু হয় তবে মরণের আগে দেখা পৃথিবীতে কারা বেঁচে থাকে! তাদের নশ্বর  দেহভার কাদা মাটি জলে গড়াগড়ি ডোমের হাতের তালু বৃহত কঠিন শতজন্ম অতিক্রান্ত শোক ক্রোধ আলো অন্ধকার অভিমান কামনা বাসনা সহস্র ঝর্নার জল ধুয়ে দেয় দেহ মুখাগ্নি প্রসন্ন  জেনে মৃগশিরা নক্ষত্রের দেহ জলের নিকটে ভেসে আসে জল ও আগুন
স্রোতস্বিনী চট্টোপাধ্যায়'র কবিতা হাওয়া  ঘাটে বাঁধা নৌকোগুলি দুলে ওঠে জলের কিনারে শ্মশানের ধার ঘেঁষে গল্পগাছা শেষ হয়ে এলে শবদেহ পুড়ে যায় নিভে আসে কাঠের আগুন একা ডোম বসে থাকে,বাকি কাজ মনে মনে সারে ধুলো ওড়ে, নিরাপদে ফিরে যায় বন্ধু পরিজন নৌকোগুলি অবিকল চাঁদের মতন মনে হয় জলে কেউ ফেলে দিয়ে, চলে গেছে দূরের পাড়ায় মায়াবী জ্যোৎস্নায় মোড়া,নিশ্চুপ,রূপোলি শিহরণ যেন ওই আলোটুকু মানুষের প্রবল আশ্রয় এই তবে জাদুখেলা পুড়ে যাওয়া দেহের ওপর জন্মের কাছেও এসে মাঝেমাঝে ছেলেখেলা করে কার ঘরে লণ্ঠনের ছায়া পড়ে উস্কে ওঠে ভয় তবে কেউ জেগে আছে রাত্রি তার শিয়রের কাছে বুনো হাওয়া পাক খায় বাড়িটির আনাচে কানাচে
আনন্দী চট্টোপাধ্যায়'র কবিতা  দ্বন্দ্ব  সঠিক সময় এলে সামনের রাস্তা নদী হয়ে উঠবে এখন চোখের সামনে কেবলই দলা পাকানো ছবি আর দোমড়ানো দৃশ্য একদিন এইসব দৃশ্য শুকনো ফুলের মত ঝরে পড়তে দেখব সহজের দিকে নিরন্তর ছুটে যেতে চেয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে হরিণ তার শরীরের সোনালী মিশে যাচ্ছে আকাশে একদিন আকাশ ও মাটিকে সাজিয়ে নেওয়া হবে ঠিক মাটির দুপাশে এখন এলোমেলো, অস্পষ্ট শব্দ ফুরিয়ে আসার ভয়, অথবা যা শুরুই হয়নি কোনোদিন
                     ছবি সৌভিক বসু সৌভিক বসুর কবিতা   ভূপর্যটক ১ এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে একদিন  লাশ হয়ে যাবে। তোমার অতি প্রিয় কাপড়ের টুপি ইঁদুরে খেয়ে ফেলেছে। তেমন কোনো ভয় বা আতঙ্ক গ্রাস করতে পারেনি তোমায়, জলের অভাবে অথবা জ্বরে অনেকদিন ভুগে মারা গেছে যারা তাদের নাম মনে তো পড়বেই। জীর্ণ তাবুর ভেতরে  এসব ভাবতে ভাবতে, হে ভূপর্যটক, মৃত্যুর পর এক ঐতিহ্যবাহী হাওয়া তোমাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জীবনের দিকে, যেখানে কেউ কোনোদিন গাছ কেটে তীর্থে যাবে না... ২ আকাশের দিকে চোখ রেখে শুয়ে ছিলে সারারাত। গায়ে ছিল তাপ্পি মারা শার্ট আর ঢলঢলে পাজামা ধুসর, অবাধ্য শিশুর মতো বৃষ্টি তোমাকে তচনচ করে ভোরবেলা থেমে গেলো। এখন কেউ নেই তোমাকে গালমন্দ করার, আগুন জ্বালাবার মতো কাঠ সেও তো নেই- পিঠের ঝোলা থেকে ডায়েরি আর পেন্সিল বের করে নতুন একটা চিঠি লিখতেই পারো। বলতেই পারো, হে সভ্যতা, আমাকে উদ্ধার করো সমস্ত দুর্যোগ থেকে। পায়ের বুড়ো আঙুল থেকে একশ হাত দূরে একটা নেকড়ে মাটিতে নাক দিয়ে গন্ধ শুকছে, তোমার আদর্শ ভ্রমণের পথ যেকোনো সময় ফুরিয়ে যেতে পারে