সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান






অর্ণব সাহার কবিতা











স্বপ্নের কশেরুকা




অহংকারের বেশিটাই ফেনা তুমি সেই বাথটবে শুয়ে
ফাঁপা বুদ্‌বুদ ছুঁড়ে মেরেছ আমায় । অসম্মান
পিছলে গেছে দেয়ালে । আমি বর্ম, আমিই
                                           প্রাইভেট আর্মি
গড়চিড়োলি থেকে একলা হেঁটে এসেছি
জলাজঙ্গল, পানাপুকুর, হাইরাইজ ও কলোনি-অধ্যুষিত এই
                                   ৪৪ বছর পেরিয়ে...
তুমি, আত্মসচেতন বালিকা মদের টেবিলে
বসে বলেছ—“যে প্রেম খুঁজেছেন, কখনও আসবে না”

কাউকে চাইনি আমি । বিশ্বাস করো
তোমার দেড় বিঘৎ কাচের হৃৎপিণ্ডে আমি
থুতু দিই । আমি, পেচ্ছাপ করি খোলা রাস্তায়...









তোমার স্তন, তোমার নাভি, জঙ্ঘা ও যোনিদেশ
তোমার স্নায়ু, কানের লতি, কোমরের খাঁজ
ঊরুতে গভীর ট্যাটু, যৌন-চুলে ছাঁটা হার্টসাইন
এখনও শেষরাতের আচ্ছন্ন ঘুম নষ্ট করে

কাত হয়ে শুয়ে রয়েছ । তোমার বিস্ফারিত পাছা
বিস্মৃতির তলদেশ খুঁজে দেখতে বলে । আমি সেই
কুয়োর অসম্ভব নীচে জ্যান্ত শোল মাছ দেখতে পাই
ওর তলায় কাদাজল । আত্মার জীবাশ্ম লিখে-রাখা

কতো দ্রাঘিমাংশে ওই জাহাজ ডুবেছিল ?
শত ডুবুরির চিৎকারে লবণাক্ত সামুদ্রিক জল
থিতিয়ে আছে । ওইখানে, লোহালক্করের ভাঙা স্তূপে
একজন মৃত শিল্পী তোমার ন্যাংটো শরীর আজও
                                   এঁকে যায়








গুহার ভিতরে এক রমণীর খোলা চুল শচীশের মুখে
                                            পড়েছিল !
রোমশ জন্তু, যাকে অন্য কোনও ডাকনামে
সম্বোধনের কথা ভাবেওনি কেউ । তার ছায়া
হাজার আলোকবর্ষ দূর থেকে গ্রহণের সংকেত
                                      দিয়ে যায়...

অলৌকিক ছোঁয়া পেয়ে পুরুষের শিশ্ন জেগে ওঠে
ওদের বাগানে পাখি গান গায় । আরও বিপন্নতা
নাবিকসমেত ওই স্টিমারের ভবিষ্যৎ কিনারগামী করে !

কালক্রম মেনে চাঁদ ডুবে যায় । চরাচরে ভরাকোটাল
                                                  হয়...







এই পথ বারণাবতের । আটমাসের নির্বাসনে পাঠিয়ে আমার
সংকুচিত আত্মাকে খাঁচাবন্দী করেছে শিকারি !
বুকের মধ্যে দোল খায় একজোড়া কচি নরম হাত
যাকে সেই গতজন্মে ছেড়ে এসেছিলাম আমি...

অশ্রু এক অপার্থিব আখ্যান । সেই ভোরবেলায়
দুই বন্ধু পথের মোড়ে ধাক্কা খেয়ে ভিন্ন হয়ে গেল ।
হাঁড়ি আলাদা হয় একান্নবর্তী পরিবারের
একজন সাঁতার কাটে । বাকিরা তলিয়ে যেতে শেখে ।

এইভাবে কবিতা হবে না । বুনুয়েলের ‘অবস্কিওর
অবজেক্ট অফ ডিজায়ার’ ছবির মতো হাতফেরত
সারিবদ্ধ আঁতেলদের আড্ডায়, ওহে, কেউ
পিঠ চাপড়ে দিলেই ভেবো না কবিতা হচ্ছে !

কবিতা আসলে মুঘল জাফরির মতো । ভিতরে
                      সচ্ছন্দ আলোবাতাস খেলে...






ভাবো, এক বিরতিহীন ঘুম ও স্বপ্নের তেপান্তর
মঠের জানলা দিয়ে দেখা যায় পরিব্রাজক লামা
ঝোলায় পাথেয় আর কবেকার গুপ্ত-ছিন্ন পুথি
ইতিহাসের পাতা থেকে ডেকে ওঠা বন্য টিট্টিভ
রক্তের উপত্যকায় হন্যে হয়ে মৃতদেহ খুঁজছে ক্লান্ত
                                               শকুনেরা
ভাঙাচোরা পৃথিবী এক অলীক ভাগাড়
সন্ধে নামার আগে যখন স্ট্রিটল্যাম্প জ্বলে ওঠে
শান্ত প্রচ্ছায়া । আমি গতজন্ম থেকে হেঁটে এসে
রাস্তার মোড়ে দাঁড়াই । জীবনবীমার আলো
পঞ্চপ্রদীপের মতো শহরের ঢাল বেয়ে নামে !
কয়েকশ’ বামন সেই আধো-অন্ধকারে হেঁটে যায়...







অন্যের প্রেমিকা । সঙ্গে ১৪ ফেব্রুয়ারির দুপুর
কাটিয়েছি । বালিহাঁস জলাশয় থেকে উড়ে গিয়ে
মেঘের শরীরে এঁকে দিয়েছে চিত্রার্পিত ডানা ।
কবরখানার ভাঙা পাথরে অতর্কিত ফুল
বলেছে—“নিষ্ঠুর হও । আরও স্বৈরাচারী হতে শেখো...”
বিবিধ ভারতী শুনে ভুলে যাওয়া মেদুর রাগিনী
অযথা স্বপ্নদৃশ্য এঁকে দেয় । ভরসন্ধেবেলা
যেন কার বুনো চুল মুখের উপরে ঝরে পড়ে...
পুড়ে-যাওয়া সিগারেট । অমীমাংসিত গল্পগুলো
একজোড়া তেতো ঠোঁটে স্বাদবিভ্রমের খোঁজ দেয় ।

আজ সে কোথায় ? তার ভরাট দু’বুকে
নীল যন্ত্রণার তাজা চিহ্ন দেখে আলো নিভে যায় !




মগজের ভিতরটা উইপোকা খেয়ে ফেলেছে
যে ভাঙা সাইকেল আমি পুরোনো বাড়িতে ফেলে
                                        এসেছিলাম
তার সমস্ত গতি আজ অন্ধকারে স্থির !
প্যাডেল ভাঙা । জং-ধরা চাকায় মরচে পড়েছে ।

মাথার উপর খোলা আকাশের নীচে একদিন
একলা দাঁড়িয়েছিলাম । কোনও শালগ্রামশিলাকে
                          দেখে মুরুব্বি মনে হয়নি ।
তাই কাঠের ঘোড়ার চেয়ে ঢের বেশি সহনীয় ছিল
পায়ে হেঁটে বাগবাজার । অলিগলিতে ঘোরা ।

উপরে চক্কর দিত আধিপত্যপ্রবণ শকুন :
নিঃশব্দে ফুটেজ তুলত স্বেচ্ছাচারী ড্রোন !





মনশ্চিকিৎসক, তুমি প্রথম শেখালে আমি কীভাবে নিজের
ব্যাকড্রপ তৈরি করব । রসদ সংগ্রহ করব নিজেকে বাঁচাতে ।
এই শীত । এই ঝড়-বৃষ্টি সমাকীর্ণ মহাদেশে
যেখানে মানুষ আজও মেরুভল্লুকেরই মতো আদিম,
                                             আগ্রাসী !

আমরা সব সম্ভাবনা বাইরে থেকে খুঁজে নিতে চাই
ভিতরমহলে রয়েছে আলিবাবার গুপ্তভাণ্ডার

পারলে গভীরে যাও । মগজের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে
তুলে আনো মাংস-মজ্জা, বাতানুকূল ক্লেদ ও সমাধি
পারলে শিরার গায়ে আচমকা ব্লেড চালিয়ে দাও
ঘুম ছিঁড়ে ফেলো । ওটা আত্মসমর্পণ । ওকে মাথায়
                                        তুলো না !

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অরিত্র সান্যালের গুচ্ছ কবিতা  কয়েকটি লেখা                                 [ যা আমি গিলে খেয়েছি এতকাল প্রতিটি নিরুদ্দেশের অন্ধকার আমার মধ্যে আজ অনর্গল উসখুস করে কালো কালি ] ১। গর্ত থেকে পতন উপচে পড়ছে আমার বিশাল সব জাহাজ একে একে শূন্যতা গেঁজিয়ে ভেসে ওঠে মণি ঘিরে এক বন্ধ মাল্লা আমার আমার চারিদিক সম্পূর্ণ নয় এখনও ২। চার পাঁচটা অসম্পূর্ণ বাক্যের মধ্যে আছি এখন সে সব থেকে সুতো বেরিয়ে আছে হাওয়া নাড়ায় তাদের একটা পর্দা যেভাবে আমাদের ঘিরে রাখে বাইরে অনাদি শীতল কাল ৩। একটি প্রশ্নচিহ্নের আঁকশি নেমে আসে কে কে ফিরে যেতে চাও ফেলে আসা মাধ্যাকর্ষণে? খাদ থেকে এখন আমার স্বর হাউই ছুঁড়ল একটি- তারপর? জীবন অনন্ত শূন্যতায় উদ্ধৃত ৪। আমার পিছনে এখন তুমি এসে বসেছ-  শান্ত নিস্পন্দ ঝরে যাওয়া এখন শুধুই যতটুকু বয়ে নিয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস আমি তোমার না-লেখার ...
দীপঙ্কর বাগচীর কবিতা paul gauguin  ঈশ্বর ও গাধার সংলাপ   সকল কাজের কাজ, ফেলে আসে আমাদের গাধা এ জীবন ঘূর্ণমান, এ জীবন বস্তুতঃই বাধা কে তবে ফিরেছে দূরে, সন্ধ্যা সূর্যে এতো রঙ করা বিষাক্ত বীজের ক্ষেত ছুঁয়ে আছে যেভাবে পাহারা এই রাত্রি নমাজের, এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু, আছে নাকি দিনের অদূরে মানুষের মতো ঠোঁট, মানুষের মতো কেউ বসে আমার সমস্তবেলা কেটে যায় কীসের আবেশে ঋতুও যখন আসে ধস্ত হয়ে বিকারের প্রায় দূরে দূরে জ্বলে তারা, বালিকারা কোথায় হারায় দিনের ভিতরে দিন ডুবে গেলে গোলার্ধের পরে কে তবে এসেছ এই রাত্রিদিন এমন আষাঢ়ে এই রাত্রি নমাজের এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু আছে নাকি দিনের অদূরে বাতাস কচুরিপানার দেশে, এসে গেছি অবশেষে ভাঙা বাড়িটার আলো বলেছিলে সব ভালো কোন পথে তোমাকে হারাই  আমার তো কিছু নাই , অন্ধকার বনে তাই একা একা ঘুরে গেছি সব কিছু মিছি মিছি বাতাসের দোলা লেগে ,এসেছে সবাই যতো ভাবি এলোমেলো ,কুয়াশায় কারা এলো ঝোড়ো হাওয়া বুকে নিয়ে এপাড়া ওপাড়া দিয়ে উড়ে যায় টিন ছাদ ,দেখো সাঁই সাঁই তুমি বলেছ...
পাঠ প্রতিক্রিয়া অতীতের সাথে চলতে থাকা নিরন্তর কথোপকথন         সৌরভ বাঁক দ্য কলিং অব হিস্টরি / স্যর যদুনাথ সরকার অ্যান্ড হিজ এম্পায়ার অব ট্রুথ। দীপেশ চক্রবর্তী।পার্মানেন্ট ব্ল্যাক,২০১৫, ৫৯৫। "Reading is traveling without the bother of baggage."                             ( Emilio Salgari) লকডাউনের শুরুতেই রামচন্দ্র গুহের একটি সম্পাদকীয় কলমে পড়া এই লাইনটা বেশ মনে ধরলো , মনে পড়লো  কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে" গানটির কথা । সুতরাং আমিও বইকে অবলম্বন করে হারিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিলাম । ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে আমাদের যা অভ্যাস সেই মত টাইম ট্রাভেল করবো বলেই মনস্থ করলাম । অর্থাৎ বর্তমানে বসে অতীতের একটি নির্দিষ্ট সময়ের  বিশেষ একটি প্রক্রিয়াকে বুঝবো । এক্ষেত্রে আমার অবলম্বন হল দীপেশ চক্রবর্তীর The Calling of History বইটি। আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত তিনশো চার পাতার বইটির আলোচনা কাল বিংশ শতাব্দীর প্রথ...