সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান






আলফ্রেড লিখটারস্টাইন-এর কবিতা

অনুবাদ- হিন্দোল ভট্টাচার্য












সকাল

আর সমস্ত রাস্তাই পড়ে আছে বিবশ হয়ে, পরিষ্কার এবং স্বাভাবিক।
মাঝেমাঝে শুধু একজন উন্মাদ লোক হুড়মুড় করে ছুটে যাচ্ছে।
একজন অত্যন্ত স্মার্ট যুবতী তার বাবার সঙ্গে ঝগড়া করছে,-
একজন রুটিবিক্রেতা, শুধু, আকাশের দিকে সুন্দর তাকিয়ে রয়েছে।

মৃত সূর্য বাড়িগুলির উপরে ঝুলে আছে, ঘন হয়ে আছে কুয়াশা
একটি বারের বাইরে চারজন মহিলা এলোমেলো পা ফেলছে এদিক ওদিক
ক্যাবের ড্রাইভার ঘাড় ভেঙে পড়ে আছে রাস্তার উপর।
আর সবকিছুই উজ্জ্বল ভীষণ, আলোকিত, পরিষ্কার এবং স্পষ্ট।

একজন বোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ভেসে গেলেন উন্মাদের মতো, অন্ধকার নিয়ে
এক অসুস্থ ঈশ্বর...এই দৃশ্যে... যা তিনি ভুলে যাবেন সহজেই
অথবা মনে পড়বে না তাঁর... বিড়বিড় করে কিছু বলবেন...মারা যাবেন আর হাসবেন
তিনি স্বপ্ন দেখবেন একটি সেরিব্রাল স্ট্রোকের...প্যারালিসিস এবং পচে যাওয়া হাড়ের।








বন্ধু

শুকনো পাতা রয়েছে পড়ে অমনোযোগী
এমন কালো মেঘের নীচে মানায় না
ধোঁয়ায় ঘেরা বসন্তকাল, তীব্র
এমনদিনে মানায় না আর মানায় না
তোমার কালো কফিন নিয়ে নীরবতায়
তোমার পাশে একটু খানি মাটি ও জল
মাটির মনে বিষ জমেছে পোড়া বারুদ
কোথায় যাব? কোথায় আছে বিশুদ্ধ ?
বন্ধু তুমি। কবরে শুয়ে রয়েছে যে
তার শরীরে ভালবাসার দাগ তো নেই
রয়েছে কিছু হিংসা এবং দেশপ্রেম
শুকনো পাতা উড়ছে, ওরা বিপন্ন
এমন দিনে মানায় না আর মানায় না
এমন দিনে ভালোবাসাও মানায় না








যুদ্ধবিরতি

বার্লিনের সন্ধ্যাবেলা যখন কুয়াশা ও বোমার আঘাতে
ভিখিরির খিদের মতো একা হয়ে যায়
তখন যুদ্ধের কথা শুনলেই হো হো করে হাসে ফাঁকা বাজার
বাঙ্কারগুলোয় শুরু হয় কঙ্কালের নাচ
বুঝি না একটা বন্দুক নিয়ে আমি কীভাবে অন্ধকার পেরোব
যদি না অন্ধকার নিজেই পেরোতে চায় আমাকে
শত্রু শুধু বাইরেই নেই, আমাদের বুকের ভিতর কড়া নাড়ছে
হে ঈশ্বর, এই সন্ধ্যাবেলাগুলো সকাল করে দাও
দেখি কত মৃতদেহে এখনও ধুকপুক করছে প্রাণ
তাদের চোখে এখনও স্বপ্ন আছে কিনা



















অন্ধকারের গান

এখনই দরকার তবু ফুলের সুবাস
এখনই দরকার প্রেম, দুঃখ পাওয়া মুখ
শবানুগমন করে শবের কফিন
ঝড়ের সতর্কবার্তা কে দিল যে কাকে?
ভেঙে পড়ে যায় সব, ভেঙে পড়ে গেছে
কোথায়্ পালাব প্রিয়া, তুমি কতদূরে?
হয়তো মাটির দেহে মাটি হয়ে আছ
হয়তো বারুদগন্ধে ভরে আছে ঘর
ওদিকে সাপের ডাকে সাড়া দেবে বলে
বেরিয়ে পড়েছে যত বিদেহী শকুন
তবুও এখনই চাই ফুল কিছুক্ষণ
কোথায় যে যাব প্রিয়, কোথায় যে ঘর
চারিদিকে বারুদের ফুল পড়ে আছে



বাইবেলিয় ( বিবলিকাল)

ঘরের ভিতর পা রেখে দেখি, আমার আত্মবিশ্বাস আয়নায় দুমড়ে গেছে। তার ভিতর দিয়ে বেরিয়ে এসেছে একটি ভীতু লোক। অন্ধকার তার করোটি। দুচোখের গর্ত থেকে বেরিয়ে আসছে আর্তনাদ।
আমি প্রশ্ন করলাম, তুমি কোথা থেকে এলে? কোথায় চলেছ?
সে উত্তর দিল না। আমার দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলল, পাপ!

রাত্রি

জানি না, এই হাসপাতালের করিডোর দিয়ে আর হেঁটে আসবেন কীনা ইশ্বর!
একটি ট্যাঙ্ক রাত দুটোর সময় ওই পথ দিয়ে গ্রামের বাড়ির দিকে চলে গেছে।
দেওয়ালে হাহাকার করছে শিশুদের সোয়েটার, ঝুলিয়ে রাখা তোয়ালে এবং ছেঁড়া
একটা কোট। একটা চামড়াও ঝুলছে। নীচে একটা মুখ। ওই দিক দিয়ে আর্যরা এসেছিল, বলেছেন কেউ কেউ। ওই দিকে খুব অন্ধকার।

আরও কত যুদ্ধ বাকি আছে!







( আলফ্রেড লিখটারস্টাইন। জন্ম ১৮৮৯ সালে। সেখানেই পড়াশুনো। ১৯১৩ সালে আইন নিয়ে পাশ। বাভেরিয়ান রেজিমেন্টে এক বছরের জন্য মিলিটারি সার্ভিসে যোগদান। বেলজিয়ামে যুদ্ধে যান। ১৯১৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুদ্ধে প্রাণ হারান। ১৯১৩ সালে তাঁর একটি কাব্যপুস্তিকা প্রকাশিত হয়- Die Dummerang। মৃত্যুর পর ১৯১৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর কাব্য এবং গল্পসমগ্র। এক্সপ্রেশনিস্ট কবিতার এক ধারা তিনি তাঁর স্বল্প জীবদ্দশাতেই গড়ে তুলেছিলেন। গদ্যছন্দেই লেখা বেশির ভাগ কবিতা। কয়েকটি বাদে। সেগুলি টেট্রামিটারে লেখা। অনুবাদের সময় পেন্টামিটারকে অক্ষরবৃত্ত, টেট্রামিটারকে মাত্রাবৃত্ত এবং গদ্যছন্দকে গদ্যছন্দেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তবে স্বাভাবিক ভাবেই, সবক্ষেত্রে অন্ত্যমিল অনুসরণ করা যায়নি।)




https://youtu.be/j8nHqkR4U44

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দীপঙ্কর বাগচীর কবিতা paul gauguin  ঈশ্বর ও গাধার সংলাপ   সকল কাজের কাজ, ফেলে আসে আমাদের গাধা এ জীবন ঘূর্ণমান, এ জীবন বস্তুতঃই বাধা কে তবে ফিরেছে দূরে, সন্ধ্যা সূর্যে এতো রঙ করা বিষাক্ত বীজের ক্ষেত ছুঁয়ে আছে যেভাবে পাহারা এই রাত্রি নমাজের, এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু, আছে নাকি দিনের অদূরে মানুষের মতো ঠোঁট, মানুষের মতো কেউ বসে আমার সমস্তবেলা কেটে যায় কীসের আবেশে ঋতুও যখন আসে ধস্ত হয়ে বিকারের প্রায় দূরে দূরে জ্বলে তারা, বালিকারা কোথায় হারায় দিনের ভিতরে দিন ডুবে গেলে গোলার্ধের পরে কে তবে এসেছ এই রাত্রিদিন এমন আষাঢ়ে এই রাত্রি নমাজের এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু আছে নাকি দিনের অদূরে বাতাস কচুরিপানার দেশে, এসে গেছি অবশেষে ভাঙা বাড়িটার আলো বলেছিলে সব ভালো কোন পথে তোমাকে হারাই  আমার তো কিছু নাই , অন্ধকার বনে তাই একা একা ঘুরে গেছি সব কিছু মিছি মিছি বাতাসের দোলা লেগে ,এসেছে সবাই যতো ভাবি এলোমেলো ,কুয়াশায় কারা এলো ঝোড়ো হাওয়া বুকে নিয়ে এপাড়া ওপাড়া দিয়ে উড়ে যায় টিন ছাদ ,দেখো সাঁই সাঁই তুমি বলেছ...
অরিত্র সান্যালের গুচ্ছ কবিতা  কয়েকটি লেখা                                 [ যা আমি গিলে খেয়েছি এতকাল প্রতিটি নিরুদ্দেশের অন্ধকার আমার মধ্যে আজ অনর্গল উসখুস করে কালো কালি ] ১। গর্ত থেকে পতন উপচে পড়ছে আমার বিশাল সব জাহাজ একে একে শূন্যতা গেঁজিয়ে ভেসে ওঠে মণি ঘিরে এক বন্ধ মাল্লা আমার আমার চারিদিক সম্পূর্ণ নয় এখনও ২। চার পাঁচটা অসম্পূর্ণ বাক্যের মধ্যে আছি এখন সে সব থেকে সুতো বেরিয়ে আছে হাওয়া নাড়ায় তাদের একটা পর্দা যেভাবে আমাদের ঘিরে রাখে বাইরে অনাদি শীতল কাল ৩। একটি প্রশ্নচিহ্নের আঁকশি নেমে আসে কে কে ফিরে যেতে চাও ফেলে আসা মাধ্যাকর্ষণে? খাদ থেকে এখন আমার স্বর হাউই ছুঁড়ল একটি- তারপর? জীবন অনন্ত শূন্যতায় উদ্ধৃত ৪। আমার পিছনে এখন তুমি এসে বসেছ-  শান্ত নিস্পন্দ ঝরে যাওয়া এখন শুধুই যতটুকু বয়ে নিয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস আমি তোমার না-লেখার ...
অনুবাদ কবিতা কবীরের কবিতা অনুবাদ – চৈতালী চট্টোপাধ্যায়  চৈতালীর কবীর ১ মন তো অসাধু ব্যবসায়ী। তাতে লগ্ন হয়ে আছে এক কুটিলা পত্নী আর পাঁচ-পাঁচটি বেয়াড়া সন্তান! মন,ফিরবে না। বলছে কবীর, মনে ভারী শক্ত গিঁট পড়ে গেলে, সহজে খোলে না ২ কোরানে কিংবা বেদে, এ-শিক্ষা কোথাও নেই! লাগাম লাগিয়ে মুখে, পিঠে জিন পরাও, রেকাবে পা দাও। তারপর চলা-মন, তারপর পথ,নির্জন, সোজা স্বর্গে গেছে ৩ লোভ যেন ঢেউয়ের মতো। তোমাকে ডোবাতে কিছু জল লাগে না! রাজসিংহাসনে রাজা। রানী, রূপবতী। পূজারী পণ্ডিত, কিংবা ভেল্কি-দেখানো এক যোগী। নির্জলা সমুদ্রটিতে সব ডুবে গেলো! তবে,কে জীবিত? যার মন শিলায় গ্রস্ত, কবীর জানালো ৪ তীরে বসে থাকি। নৌকো আসবে। কোথায় যাচ্ছি? স্বর্গ আদৌ আছে নাকি! ওহে নয়নপথগামি! তোমাকে সর্বত্র দেখি আমি। কবীর মিনতি করে, এ-যাত্রা দাও রেহাই! আছি বেশ, এখানেই তো আমার ঠাঁই ( কবীর অনুবাদ করেছি বটে, কিন্তু সেই আধ্যাত্মিকতা বোঝার সাধ্য আমার নেই। সেই সময়ের ভক্তি ...