সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান



স্রোতস্বিনী চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা


ছবি- গুগুল




  

রাষ্ট্র 
----
কী আশ্চর্য গান বাজে 
পৃথিবীর পথে 
মোহময় সে সুর 
মানু্ষের পায়ে প্রাণ ফিরে পায় 

বেলা ক্রমে শেষ হয়ে আসে 
বেড়ালের ভাত ঘুম জুড়ে 
লেগে থাকে হ্লাদিনী আহ্লাদ 
দুটো ফুল পড়ে আছে বাঁকা পথ শেষে 
পৃথিবীর গান শোনা 
শেষ হল তার 

আকাশ প্রলয় নিয়ে আসে 
আকাশ শিকারের ফাঁদ পেতে রাখে 
তাই রাত নামে চুপিসাড়ে
রাত নামে মানুষের গায়ে 
পিষে ফেলে দেহ 
চাকার দাগের স্মৃতি যেন 
মহাপ্রস্থানের পথে নিয়ে যায়
তারারা ঘুমোয় অসহায় নিয়তির প্রায় 

কেউ কেউ জেগে ছিল ওই দিন
ওই দিন রেল ট্র‍্যাক ভিজে একাকার 
ঘাম রক্ত মিলেমিশে 
অপরূপ দেশের সরকার 
দুখিনীর প্রাণ জুড়ে, বক্তৃতা দিয়েছিল 
সেও যেন শোকস্নাত স্তব! 

মানুষের পিষে যাওয়া দেহ
মানুষের পিষে যাওয়া মন
মানুষের পড়ে থাকা রুটি 
এসো আজ দেখি,
এই জল্লাদের উল্লাস 
এই জল্লাদের চেতাবনি 
রাত আটটা বেজে গেলে 
ঘরে পথে বেজে ওঠে 

এমনি প্রেক্ষাপটে ক্ষুধার মিছিল
আলো আঁধারের গায়ে চুপ করে ফোটে 

স্বপ্ন-১
----

একদিন সমস্ত শেষ হবে 
গাল গল্পে যেমন শোনায় 
খিদে পেটে শ্রমিক জনতা 
একা হেঁটে যায় 

হেঁটে যায় চেনা পথ 
হেঁটে যায় অচেনা পাড়ায় 

হাইওয়ের ধার ঘেঁষে হেঁটে যায় 
রাত চিরে লড়ি পিষে মারে 
এই তো নিয়তি,ভোজবাজি, 
অশেষ জাদুর বশে 
ঢিমে করে দেয় আলো 

আকাশের ওইপারে হাওয়া ওঠে 
পূবে ভাসে রক্ত রাঙা মেঘ 

মৃত্যু সহজাত বলে,
যারা হাঁটা দিয়েছে আবার 
উঠে পড়ে অন্য কোনও লড়ির ভিতর
তারাও কি জানে নাকি
লাশগুলি পচে গেছে 
ঘরের খবর, পায়নি 
পাওয়ার আগেই হয়েছে নিখোঁজ

স্বপ্ন-২
------

এইবার শোনাও তুমি কোন গ্রাম
কোন সেতু পার হয়ে গেলে, 
দেখা যায় আলো

একটি দুটি তারা ঝরে গেলে 
কার মুখ, ভেসে ওঠে, বলো?

প্রতিচ্ছবি 
-------

আকাশ ভাসিয়ে সূর্য ডুবে যায় 
মেঘ করে আসে 
আমার দেশের লোক, সচকিত 
চেয়ে থাকে 

পৃথিবীর সব রং ধুয়ে যায় 
ভারতবর্ষে এছাড়া আর কি বা মানায়

তুমি আমি জানি সব 
বুঝে ফেলি ঠুনকো হুশিয়ারি 
মনে মনে হাসি আর 
মাঝেমাঝে গাল মন্দ পাড়ি 

এভাবেই দিন যায় এভাবেই রাত 
কোথায় নিভৃতে একা 
আমার বরাত
উস্কে ওঠে,শান দেয়, অলস মহরায় 
আবছা আলোয় মানুষের মুখ 
ভূতের মতোন মনে হয় 

যাত্রা
-----

হাতে ব্যাগ,লাঠি ঠুকে ঠুকে 
ওই যারা চলেছে দেশের ভিতর থেকে 
তাদের চিনেছ ঠিক
ভোটে জেতা নরখাদকের দল

তারাই প্রাচীন আলোয় 
রোদ জ্বলা দুপুরে শ্রমিকের ঢল 
পার করে গেছে কত শত পথ 
ভূগোলের সীমানা থেকে 
অদ্ভুত কাহিনী নিয়ে ঘরে ফিরে আসে 

ওষুধে অসুখ সারে 
খিদে সারে নাকি? 
জানো বুঝি তুমি সব 
বোকারা নেহাৎ নিপুন চালাকি
পারেনি কখনও তাই হেরে গেছে রোজ
বাঁচার নেশায় মত্ত অথচ নিখোঁজ 

এরা সব নিরুপায় 
অনতিদূরে মাঠের দিকে, মনে মনে
একা হেঁটে যায়

অভিশাপ
-------

আত্মনির্ভরশীল এই দেশ 
মৃত শিশু কোলে নিয়ে হেঁটে যায় 

তখন ঘরের বাইরে মোম জ্বলে 
বাজি পোড়ে, থালা বাসনের শব্দ 
নিশির ডাকের মতো মনে হয় 

মায়ের দুধের ভার বেড়ে যায় 
মায়ের দেহের থেকে নুয়ে পড়ে প্রাণ 

এই ছিল তার স্বপ্নে দেখা দিন? 
এরই লোভে পথ ভুলে 
এসে পড়েছিল এদেশে?

শিশু কোলে নিয়ে হেঁটে যেতে যেতে 
খুচরো স্মৃতির মতো মনে পড়ে
পুরনো বাড়ির চাল, 
বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা মাটি 
বুনো ফুল হাওয়া মাখামাখি করে 
বসত ভিটের কাছে 
পড়ে থাকে একলা, একাকী

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অরিত্র সান্যালের গুচ্ছ কবিতা  কয়েকটি লেখা                                 [ যা আমি গিলে খেয়েছি এতকাল প্রতিটি নিরুদ্দেশের অন্ধকার আমার মধ্যে আজ অনর্গল উসখুস করে কালো কালি ] ১। গর্ত থেকে পতন উপচে পড়ছে আমার বিশাল সব জাহাজ একে একে শূন্যতা গেঁজিয়ে ভেসে ওঠে মণি ঘিরে এক বন্ধ মাল্লা আমার আমার চারিদিক সম্পূর্ণ নয় এখনও ২। চার পাঁচটা অসম্পূর্ণ বাক্যের মধ্যে আছি এখন সে সব থেকে সুতো বেরিয়ে আছে হাওয়া নাড়ায় তাদের একটা পর্দা যেভাবে আমাদের ঘিরে রাখে বাইরে অনাদি শীতল কাল ৩। একটি প্রশ্নচিহ্নের আঁকশি নেমে আসে কে কে ফিরে যেতে চাও ফেলে আসা মাধ্যাকর্ষণে? খাদ থেকে এখন আমার স্বর হাউই ছুঁড়ল একটি- তারপর? জীবন অনন্ত শূন্যতায় উদ্ধৃত ৪। আমার পিছনে এখন তুমি এসে বসেছ-  শান্ত নিস্পন্দ ঝরে যাওয়া এখন শুধুই যতটুকু বয়ে নিয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস আমি তোমার না-লেখার ...
দীপঙ্কর বাগচীর কবিতা paul gauguin  ঈশ্বর ও গাধার সংলাপ   সকল কাজের কাজ, ফেলে আসে আমাদের গাধা এ জীবন ঘূর্ণমান, এ জীবন বস্তুতঃই বাধা কে তবে ফিরেছে দূরে, সন্ধ্যা সূর্যে এতো রঙ করা বিষাক্ত বীজের ক্ষেত ছুঁয়ে আছে যেভাবে পাহারা এই রাত্রি নমাজের, এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু, আছে নাকি দিনের অদূরে মানুষের মতো ঠোঁট, মানুষের মতো কেউ বসে আমার সমস্তবেলা কেটে যায় কীসের আবেশে ঋতুও যখন আসে ধস্ত হয়ে বিকারের প্রায় দূরে দূরে জ্বলে তারা, বালিকারা কোথায় হারায় দিনের ভিতরে দিন ডুবে গেলে গোলার্ধের পরে কে তবে এসেছ এই রাত্রিদিন এমন আষাঢ়ে এই রাত্রি নমাজের এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু আছে নাকি দিনের অদূরে বাতাস কচুরিপানার দেশে, এসে গেছি অবশেষে ভাঙা বাড়িটার আলো বলেছিলে সব ভালো কোন পথে তোমাকে হারাই  আমার তো কিছু নাই , অন্ধকার বনে তাই একা একা ঘুরে গেছি সব কিছু মিছি মিছি বাতাসের দোলা লেগে ,এসেছে সবাই যতো ভাবি এলোমেলো ,কুয়াশায় কারা এলো ঝোড়ো হাওয়া বুকে নিয়ে এপাড়া ওপাড়া দিয়ে উড়ে যায় টিন ছাদ ,দেখো সাঁই সাঁই তুমি বলেছ...
পাঠ প্রতিক্রিয়া অতীতের সাথে চলতে থাকা নিরন্তর কথোপকথন         সৌরভ বাঁক দ্য কলিং অব হিস্টরি / স্যর যদুনাথ সরকার অ্যান্ড হিজ এম্পায়ার অব ট্রুথ। দীপেশ চক্রবর্তী।পার্মানেন্ট ব্ল্যাক,২০১৫, ৫৯৫। "Reading is traveling without the bother of baggage."                             ( Emilio Salgari) লকডাউনের শুরুতেই রামচন্দ্র গুহের একটি সম্পাদকীয় কলমে পড়া এই লাইনটা বেশ মনে ধরলো , মনে পড়লো  কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে" গানটির কথা । সুতরাং আমিও বইকে অবলম্বন করে হারিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিলাম । ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে আমাদের যা অভ্যাস সেই মত টাইম ট্রাভেল করবো বলেই মনস্থ করলাম । অর্থাৎ বর্তমানে বসে অতীতের একটি নির্দিষ্ট সময়ের  বিশেষ একটি প্রক্রিয়াকে বুঝবো । এক্ষেত্রে আমার অবলম্বন হল দীপেশ চক্রবর্তীর The Calling of History বইটি। আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত তিনশো চার পাতার বইটির আলোচনা কাল বিংশ শতাব্দীর প্রথ...