বিপ্লব চৌধুরীর কবিতা
ছবিঃ বিপ্লব চৌধুরী |
কুয়ো
দেখেছি পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে উঠে, দেখেছি তখনো সে ঘুমিয়ে রয়েছে,মুখের গভীর লালায় অংশত ভিজেছে বালিশ, ঘুমিয়ে আছে হাঁটু ভাঁজ করে গুটিসুটি মেরে, ভোরের ঠান্ডা বাতাসে কেঁপে কেঁপে উঠছে তার হাত ও পায়ের লোম,চাদরের যত্ন দিয়ে ঢাকি ওই শীতার্ত শরীর, দেখি মাথার কাছে রাখা বোতল টা একেবারে ফাঁকা, জল ভরে দিই সেই শূন্যতায়, এছাড়া, এইটুকু মায়াস্পর্শ বাদে আর কী-ই বা করতে পারতাম আমি, সাধ্য ছিলনা।তবু বরাবর সাধ হয়েছিল নেমে যাই তার বুকের কুয়োয়, ডুবে যাওয়া চাঁদ তুলে আনি
ছবিঃ বিপ্লব চৌধুরী |
যমুনার জল
প্রেম কি পাব না? না, অঞ্জনা তোমাকে আমি এই প্রশ্ন করছি না। যাজ্ঞসেনী, সোমলতা তোমাদেরও নয়।তবে কি ফুলের সুগন্ধ অথবা পাতার মর্মরে সব কৌতূহল রেখে যাচ্ছি আমি? তোমাদের সমস্ত অনুমান ও সংশয় ভুল হয়ে যাবে। আজ এই মর্মভেদী জিজ্ঞাসা একমাত্র নিজের কাছে একান্ত আমার।কিন্তু সেখানেও আমি কতো অসহায়, দেখো পশ্চিম বিকেল। উত্তরের নিতান্ত অভাবে নতমুখে বসে আছি একটি গাছের গোড়ায়। সদ্য নীড়ে ফিরে আসা পাখিরা আমাকে এবার ফিরে যেতে বলেছে লোকালয়ে।
ফিরে যেতে আমিও তো চাই। ফিরে যাব বলে দাঁড় করিয়ে রেখেছি যে রিকশাটিকে তার চালকও তো বলছে সে কথাই, অব চালিয়ে বাবু, রাস্তা বহুত আন্ধেরা হ্যায়। তার কথায় ভাঙে ঘোর, হেসে উঠি, যেন উত্তর পেয়ে গেছি মনে মনে। পথ যে অন্ধকার সেই কথা আমিও তো জানি, সেইকথা আমিও তো জানি, তবু কেন কিছু খুঁজতে এসেছিলাম, আর এখনো চলেছি খুঁজে,সেই নিয়তির নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানিনা।
কাকে বলে প্রেম, লিখতে অক্ষম সেই সংজ্ঞা ও সংবেদ। তবু কেন অন্বেষণে সেই নিরাকার? না, অঞ্জনা, তোমাকে নয়, মালবিকা, পারমিতা, ফুল পাতা, তোমাদেরও নয়,আমি এই প্রশ্ন আর কাউকে, এমনকী নিথর নিজেকেও আর কখনো করব না...
ছবিঃ বিপ্লব চৌধুরী |
ছবিঃ বিপ্লব চৌধুরী |
দিবা-রাত্রির কাব্য
উবু হয়ে বসে নিজেকেই দেখি, ওই তো লোকটা বাজারে যাচ্ছে রিকশায় চেপে,রুমাল দিয়ে ঘাম মুছল...আর চশমার কাচ, বেছে বেছে পারসে কিনল সাড়ে তিনশো গ্রাম,সবজিওলার থেকে নিম উচ্ছে বেগুন ঢ্যাঁড়শ পটল, মিলনের দোকানে চা খেয়ে ধরালো সিগারেট,গলি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যখন ফিরছে, কী যে দুষ্টু বুদ্ধি জাগলো আমার মাথায়,অদৃশ্য একটা কাঠি দিয়ে খোঁচা দিলাম বুকের পাঁজরে, কে দিল আবার আঘাত, বুঝতে পারল না সে,একটু থমকে দাঁড়িয়ে আবার চলতে শুরু করল, ভাবল মনের ভুল, বিকেলে লোকটা গেল কফি হাউজে,টয়লেটে গিয়ে পেচ্ছাব করল, ঘাড়ে মুখ জল দিয়ে এসে চেয়ারে বসল, কালো কফিতে চুমুক...আর সিগারেট বিড়িতে টান দিতে দিতে যখন বন্ধুদের সঙ্গে গল্পের মৌতাতে মশগুল,তখন দিলাম ফের এক খোঁচা, কে দিল আবার খোঁচা, এবারও বুঝতে পারল না ওই বুরবাক,ফুটপাত থেকে দু'একটা পুরনো বই কিনল, মদের দোকান থেকে রামের পাঁইট, যখন অধিক রাতে শূন্য বোতল গড়াল ঘরের মেঝেয়, অভুক্ত মাতাল লোকটা শুয়ে পড়ল সেখানেই, আমি কি আবার একটা খোঁচা দেব, নাকি অচেতন তার মাথার কর্কশ চুলে, কিছুক্ষণ বুলিয়ে দেব হাত,কিছুতেই বুঝতে পারলাম না... আর এভাবেই কেটে গেল রাত...
ভোর
একদিন রাতে আমি যেন স্বপ্নে দর্শন করি আমারই নধর নশ্বর দেহ, দেখি সে উলঙ্গ,বিপরীত অন্ধকারে দাঁড়িয়েছে এসে এক উলঙ্গিনী, হাতে তার খাঁড়া নেই কোনো, বুকের ওপর ঝুলছে নাম-না-জানা ফুলের সুগন্ধী মালা, আমি অবাক হয়ে দেখি তাদের পরম চুম্বন, আর মুগ্ধ হয়ে শুনি মিলনের গানে গানে এতো যে সুরের দোলা!ধীরে ধীরে সেই গান শান্ত আর স্তব্ধ হয়ে আসে, যখন পাখিরা শুরু করে তাদের ভোরাই,সুমধুর কলতান, গভীর গভীরতর ঘুম হয়ে নেমে আসে তাদের চোখের পাতায়, বিনিদ্র রাত্রির শেষে আবার আমার মধ্যে আমি মিশে গিয়ে ভাবি, এরকম গাঢ় নিদ্রা কখনো আসেনি তো আগে...
অসাধারণ। এবং বাড়তি পাওনা এই অলংকরণগুলি।
উত্তরমুছুনদারুণ লেখা। ছবি গুলি আমাদের পাওনা...
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগলো!
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগলো কবিতাগুলি। কিন্তু ছবিগুলি প্রকৃত অর্থেই বিস্মিত করে৷
উত্তরমুছুনবিপ্লব দা'র কবিতায় অসাধারণ স্বীয়তার অপেক্ষা থাকে। তারচেয়ে কিছু বেশিই ভালো লাগলো। যমুনার জল লেখাটি অসামান্য।
উত্তরমুছুনবিপ্লবদা'র এই লেখাগুলি মোহনীয় । আর অলঙ্করণগুলি বাক্ রুদ্ধ করে দেয় । প্রথম কবিতাটিতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি বিপ্লবদা নিজের ঘরেই শুয়ে । যেন নিজেরই বুকের কুঁয়ো থেকে ডুবে যাওয়া চাঁদ তুলে আনতে উন্মুখ । 'দিবারাত্রির কাব্য' আমাকে আলাদাভাবে ছুঁয়ে গেল ।
উত্তরমুছুনভালো লাগলো
উত্তরমুছুনবেশ দারুন দাদা
উত্তরমুছুনবেশ দারুন দাদা
উত্তরমুছুনছবি এবং কবিতা দুটোই অসাধারণ। খুব ভালো লাগল।
উত্তরমুছুনসবাই অসামান্য বলেছেন বলে আমিও নিশ্চিন্ত। আমারও অসামান্য মনে হচ্ছে ছবি ও কবিতার এই প্রাপ্তিতে।
উত্তরমুছুন