বিস্মৃতির পাতা থেকে
রবীন আদকের কবিতা
সুখ-দুঃখ
বুকের গভীরে কিছু দুঃখ থাকে সব মানুষেরই
চোখের পাতার নিচে জল
বুকের ভিতরে এক পবিত্র সমাধি
গহন শীতল।
বহতা হারালে নদী বালির বিস্তারে শুয়ে থাকে
চোখের পাতায় ফল্গুধারা,
বালি সরালেই জল অশ্রুর কিনারা।
আমরা সবাই তবু সুখ নামে শুকপাখি পুষি
ছোলা-ছাতু তুলে দিই দাঁড়ে
এবং ভাঁড়ারে
যখন থাকেনা কিছু প্রাচীন দুঃখের কাছে যাই
পাখি পিছু ডেকে বলেঃ কোথায় যাচ্ছ হে?
পাপে,পূন্যে,মোহে
নিরুত্তর হেঁটে যাই পুরাতন অস্তিত্বের কাছে
মজা নদী জেগে ওঠে, সমাধির নিচে রাখি ফুল
সুখ-দুঃখ কাঁপে যেন চোখের পাতায়
অমোঘ নির্ভুল।
শস্য
ক্ষেত থেকে পাকা ধানের সোনালী কার্পেট গুলি
তোলা হচ্ছে গরুর গাড়িতে,
ধান কাটা শেষ হ'ল।
এখন বিপুল মাঠে আদিম পাখিরা ধান খোঁটে,
লক্ষ্মীর পায়ের পাতা থেকে খসে পড়া নুপুর: ধান।
এখন জীবন যেন শস্যপ্রবণ প্রকৃতির বড় কাছে,
এখন যুবক-যুবতী তাই
অবাধ রৌদ্রে নিজেদের মেলে দেয়,
রাত্রির মোহন-ছিটনো আকাশের নিচে বসে গল্প করে,
বাতাসে ওড়ে পাকাধানে জমাট ক্ষীরের বিমূর্ত গন্ধ–
নিসর্গ নুয়ে পড়ে রাত্রির শরীরী সৌরভে,
রাত্রি ক্রমশ নগ্ন হয়
অন্তর্বাস খোলে কুয়াশার চিকের আড়ালে,
নিখিল নির্জনে ছড়িয়ে যায় বীজ ও ব্রীহি, আদিম জীবন।
সকালে বিপুল মাঠে পাখিরা ধান খোঁটে।
এক ভুবনেই এই আটকে আছি
চৌদ্দ ভুবন দেখবো ব'লে বেরিয়েছিলাম সাত-সকালে
এক ভুবনেই আটকে আছি,
সকাল ছিল পূব আকাশে ভাঙা ডিমের কুসুমে লাল
ভর-দুপুরে জিরিয়েছিলাম যে লেলিহান পলাশ-মূলে
সন্ধে হতেই পশ্চিম এসে হলুদ ডানার সোনার পাখি !
হৈমবতী জ্যোৎস্না এখন ডাইনে-বাঁয়ে উদোম মাঠে
এই কুহকি নদীর উপর, নদীর পায়ে ঘুঙুর বাঁধা–
আমি কি তার সঙ্গে যাব? সোনার পাখি ঠুকরে খাবে
অহংকারী চোখের পাতা।
চৌদ্দ ভুবন দেখবো বলে বেরিয়েছিলাম সাত-সকালে
এক ভুবনেই আটকে আছি,
দু'পায়ে সোমলতার বাঁধন, মাথায় আকাশ বালুচরী,
এখন আমার পথের ধুলোয়
কনকরুচি চাঁদের জরি ।।
বাউল
আকাশের ডান হাতে তখনও ধরা ছিল আলোর তম্বুরা
দক্ষিণায়নের সূর্য নিজেকে বাজাচ্ছিল দিগন্তরেখায়।
নদী পেরিয়ে মেলায় যাওয়ার আগে
দীর্ঘক্ষন আমি
এরকম একটি সূর্যাস্ত দেখেছিলাম। তখন নদীর ভিতর
অজস্র উন্মোচিত বিশেষণ, তখন বালির কিনারে
শীর্ণ জলরেখা যেন নিষ্ঠাবান পুরোহিতের ধবল উপবীত–
সেই সব আয়োজন, শেষ-পৌষের গোধূলি
ক্রমশ হেঁটে গেল নৈঃশব্দের দিকে।
আমার পিছনে বনান্তরাল,
সামনে জয়দেব কেঁদুলি–
সম্পন্ন অস্ত-সূর্য থেকে সেই মুহূর্তে আলোর একতারা হাতে অসংখ্য বাউল
কি সহজে নেমে এলো ক্রমপরিণত মেলায়,
সেই সৌর স্তব্ধতা বিশাল এক গোপীযন্ত্রে তারপর
ভেঙে পড়ল সুরে ও সমর্পণে, মনের মানুষের সন্ধানে।
পুঁথির আঁধারে
কতদিন আকাশ দেখিনি,
বাতাসও রাখেনি কাঁধে বন্ধুতার হাত
হাটুতে মুখ গুঁজে আছে নিশ্চল সময়
উদাসীন আমার শিয়রে।
পুঁথির আখরে
রাতদিন বাঁধা আছি, পুঁথির অক্ষরে অন্ধকার
অন্ধকার এপার-ওপার,
অক্ষরে বানানো মূর্খ শব্দগুলো যেন
ধড়িবাজ আরশোলার মত
শুঁড় দিয়ে মেপে নেয় আমার বুদ্ধ্যঙ্ক, বোধি, ধ্যান
পুঁথির আঁধারে আমি পাথর, নির্জ্ঞান।
কতদিন মাড়াইনি ঘাস
ছোঁয়া হয়নি নিসর্গ-নির্মাণ
জড়োয়ায় মোড়া সেই রাত্রির আকাশ
দেখা হয়নি মুঢ় এই স্বেচ্ছানির্বাসনে।
অসাধারণ কবিতা। রবীন আদক আমার ভীষন প্রিয় কবি। Questkhonj এ ওনার কবিতা পেয়ে খুবই আনন্দ পেলাম. এই ভালো কাজটি করার জন্যে questkhonj কে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই।
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগল....
উত্তরমুছুনএখনও শব্দরাজি মেলে ধরে পাখনাটি তার,
উত্তরমুছুনবসে বসে নির্ঘুম রাত করি পার।
এখনও আখর নিয়ে খেলা করে কেউ,
ভাবনারা ভেসে যায়, মন মাঝে তুলে দিয়ে ঢেউ।।