সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অভিষেক মুখোপাধ্যায়ের কবিতা



                    ছবিঃ গুগুল



ঘন সন্নিবদ্ধ বস্তি থেকে


আরজন্মে শিরদাঁড়া- রাত্রিহীন হিলহিলে সহজাবরণ
ছেদ করো তেত্রিশ সুবর্নগরল চেরাজিভ।

উচাটনে লাথি মারছে, মাতাল ত্রিকালশম্ভু শিব
বাঁকানো অস্তিত্ব, ঝোলা চামড়ার পরতে পরতে
কাঁটাতার বিতর্কিত জিন
ভেদনের দীর্ঘস্বপ্নে দামামা বাজাল রাষ্পুটিন।

অনুচ্চার বিদ্যুৎ ঝলকাল চলাচলে

কিভাবে পেরোতে হয় খোঁপাচুল শারদসকালে
মানুষ জানেনা। শুধু, মোজাইকে নখ আঁচড়ায়।

একখন্ড লতালতা, দেশ তাকে টেনে নিয়ে যায়।


সারিবদ্ধ ঘামগন্ধ সানানো ব-দ্বীপ
হাঁড়িকাঠে ছাগমুন্ড হাঁ করে আছে
শিয়রে টাটানো খাঁড়া, জবাফুল হাল্লা বোল রব
ছোঁয়াচে ছোঁয়াচে অগ্নি, ভারি তামাকের ধোঁয়া
নিভন্ত প্রদীপ যার নীচে-
ইদানিং ফিল্টার ফেটে ফেটে ধাত্রী ফুঁড়ে বুড়ো হয়
দেউটির শব

রেলিং লোহার সুতো, সরোদের রসনাতন্ত্রের
তাথৈ মারণমন্ত্র, ঝড় আনে ঝাকুনিও আনে
ইন্দ্রিয় সাঁতার কাটে হরকার বানে

তখন আঠালো লাগে, গ্রামছাড়া ঘাড়-এ-গর্দান
অলৌকিক চতুর্ভুজ বিশ্বকেশ শোনায় আজান।


এক জলপ্রবাহ চিৎকার
ভেতরে ডুমুরবুড়ি ফোটে
কী নির্বাণ জন্মান্তর তার,
গলা টিপে ধরে সে নিজেই

আর দেখি, সারাৎসার বমি করছে পেরেক, আমেন।
হয়তো এভাবে গোটা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ফুটো হয়ে যেত
যদি না, বিস্তীর্ন কোনো স্মরণহাতুড়ি তার চেরা মেদ মুখে তুলত দানা

সমস্ত শ্মশান হতো কাফেলার শুদ্ধতম ডানা;
বুকে মাথা চেপে ধরে, স্তন পুরে দিতেন মা মেরী।

হে প্রতীম বেথেলহেম মণিকাঠের বাঁধানো রসুই
উষ্ট্রকুঁজ ভাঙো... শান্তি, শান্তি, শান্তি
জড়ো হও নলকূপের ধারে

আঁচড়িকামড়ি করো, জল ফুরিয়ে না যাওয়া অবধি।




চণ্ডাশোক

যে ভাঙ্গন বিতর্কিত তার মধ্যে পা
মঙ্গলা ঊষার আঁচে পোড়ে গঙ্গাপার।

খনাকাক নাচে জলে, স্বপ্ননিবারিত
শহুরে সাদাটে দাগ জঞ্জালপীড়িত,
ধুয়ে নিচ্ছি কাটাজিহ্বা, সন্তানের নাভি;
কাকে খাচ্ছে জন্ম ছিঁড়ে ডুবে যাচ্ছে চাবি!

পৈতে থেকে মাংস মেধা ঝরে পরছে যাক
একটি মেয়ে কেবল তার চীবর ফিরে পাক

ন্যাপাম ওর সঙ্গাপথ নেতাই ওর গানে
ওর শরীরে বসত করে কামান ভগবানের-
খুঁদঅনশন, যুদ্ধজ্বালা- সেদ্ধ মেটেআলু!

আমার আজ মরণকালে সূর্য থেকে কালো
পতঙ্গদের নামিয়ে আনা বারণ।



কবিতা উৎসব

অসাড় ঘাটের মতো তালকানা বঙ্গে পড়ে আছি
যেদিকে খিদিরপুর― ভৌতিক দৌড়বো গোত্রহীন
অনঙ্গ শাসনে যদি সত্ত্ব রজঃ তমের গহীন
পর্যন্ত বেদাঙ্গপাঠ শোনা যায় তবে সম্মোহনে

অসূয়াপ্রসূত চাঁদ দীর্ঘিকায় কৃষ্ণকালে ঝোঁকা!
মুদ্রারাক্ষসজন্মে নেংটি পড়া ডুবুরি কৈশোর
ষটচক্রে মারে পাক, ভেনাসের শরীরী অসুর
দিব্যি কেটে বলছি কোনো লাল ফেট্টি ছোড়দা ধরবো না।

শুধু নগ্ন খাতা ছুঁয়ে পর্নোগ্রাফি তামাম মঞ্চের
সারশূন্য বকে যাব, ঝিল্লির আঠালো মাংসভ্রমে
লিটল পাবের বাইরে ওয়াক ওয়াক অনর্গলের
মদির প্রসঙ্গে নীল বমি করবো আশনাই বোধির―

অন্ধজাত বাফারের দশ অঙ্ক দ্রাক্ষা সংবেদ...
ধাক্কার পরের ধাক্কা দশাঙ্ক সংকেত মুছে দেবে
খুলির মোমচাক থেকে নাভিকেন্দ্র চিতায় টাঙাবে
সে জানে তোচন জানে
তোচন ডাকে না যাকে, তার ইগো ঝেড়ে ফেলতে হবে।


মন্তব্যসমূহ

  1. এই সময়ের যন্ত্রণায় বিদ্ধ। আছে তীব্র অস্থিরতা, গাঢ় শ্লেষ এবং তীক্ষ্ম শব্দতীর। অসাধারণ ভাই।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দীপঙ্কর বাগচীর কবিতা paul gauguin  ঈশ্বর ও গাধার সংলাপ   সকল কাজের কাজ, ফেলে আসে আমাদের গাধা এ জীবন ঘূর্ণমান, এ জীবন বস্তুতঃই বাধা কে তবে ফিরেছে দূরে, সন্ধ্যা সূর্যে এতো রঙ করা বিষাক্ত বীজের ক্ষেত ছুঁয়ে আছে যেভাবে পাহারা এই রাত্রি নমাজের, এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু, আছে নাকি দিনের অদূরে মানুষের মতো ঠোঁট, মানুষের মতো কেউ বসে আমার সমস্তবেলা কেটে যায় কীসের আবেশে ঋতুও যখন আসে ধস্ত হয়ে বিকারের প্রায় দূরে দূরে জ্বলে তারা, বালিকারা কোথায় হারায় দিনের ভিতরে দিন ডুবে গেলে গোলার্ধের পরে কে তবে এসেছ এই রাত্রিদিন এমন আষাঢ়ে এই রাত্রি নমাজের এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু আছে নাকি দিনের অদূরে বাতাস কচুরিপানার দেশে, এসে গেছি অবশেষে ভাঙা বাড়িটার আলো বলেছিলে সব ভালো কোন পথে তোমাকে হারাই  আমার তো কিছু নাই , অন্ধকার বনে তাই একা একা ঘুরে গেছি সব কিছু মিছি মিছি বাতাসের দোলা লেগে ,এসেছে সবাই যতো ভাবি এলোমেলো ,কুয়াশায় কারা এলো ঝোড়ো হাওয়া বুকে নিয়ে এপাড়া ওপাড়া দিয়ে উড়ে যায় টিন ছাদ ,দেখো সাঁই সাঁই তুমি বলেছ...
অরিত্র সান্যালের গুচ্ছ কবিতা  কয়েকটি লেখা                                 [ যা আমি গিলে খেয়েছি এতকাল প্রতিটি নিরুদ্দেশের অন্ধকার আমার মধ্যে আজ অনর্গল উসখুস করে কালো কালি ] ১। গর্ত থেকে পতন উপচে পড়ছে আমার বিশাল সব জাহাজ একে একে শূন্যতা গেঁজিয়ে ভেসে ওঠে মণি ঘিরে এক বন্ধ মাল্লা আমার আমার চারিদিক সম্পূর্ণ নয় এখনও ২। চার পাঁচটা অসম্পূর্ণ বাক্যের মধ্যে আছি এখন সে সব থেকে সুতো বেরিয়ে আছে হাওয়া নাড়ায় তাদের একটা পর্দা যেভাবে আমাদের ঘিরে রাখে বাইরে অনাদি শীতল কাল ৩। একটি প্রশ্নচিহ্নের আঁকশি নেমে আসে কে কে ফিরে যেতে চাও ফেলে আসা মাধ্যাকর্ষণে? খাদ থেকে এখন আমার স্বর হাউই ছুঁড়ল একটি- তারপর? জীবন অনন্ত শূন্যতায় উদ্ধৃত ৪। আমার পিছনে এখন তুমি এসে বসেছ-  শান্ত নিস্পন্দ ঝরে যাওয়া এখন শুধুই যতটুকু বয়ে নিয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস আমি তোমার না-লেখার ...
অনুবাদ কবিতা কবীরের কবিতা অনুবাদ – চৈতালী চট্টোপাধ্যায়  চৈতালীর কবীর ১ মন তো অসাধু ব্যবসায়ী। তাতে লগ্ন হয়ে আছে এক কুটিলা পত্নী আর পাঁচ-পাঁচটি বেয়াড়া সন্তান! মন,ফিরবে না। বলছে কবীর, মনে ভারী শক্ত গিঁট পড়ে গেলে, সহজে খোলে না ২ কোরানে কিংবা বেদে, এ-শিক্ষা কোথাও নেই! লাগাম লাগিয়ে মুখে, পিঠে জিন পরাও, রেকাবে পা দাও। তারপর চলা-মন, তারপর পথ,নির্জন, সোজা স্বর্গে গেছে ৩ লোভ যেন ঢেউয়ের মতো। তোমাকে ডোবাতে কিছু জল লাগে না! রাজসিংহাসনে রাজা। রানী, রূপবতী। পূজারী পণ্ডিত, কিংবা ভেল্কি-দেখানো এক যোগী। নির্জলা সমুদ্রটিতে সব ডুবে গেলো! তবে,কে জীবিত? যার মন শিলায় গ্রস্ত, কবীর জানালো ৪ তীরে বসে থাকি। নৌকো আসবে। কোথায় যাচ্ছি? স্বর্গ আদৌ আছে নাকি! ওহে নয়নপথগামি! তোমাকে সর্বত্র দেখি আমি। কবীর মিনতি করে, এ-যাত্রা দাও রেহাই! আছি বেশ, এখানেই তো আমার ঠাঁই ( কবীর অনুবাদ করেছি বটে, কিন্তু সেই আধ্যাত্মিকতা বোঝার সাধ্য আমার নেই। সেই সময়ের ভক্তি ...