সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান


জিয়া হকের কবিতা



                       ছবিঃ ফেসবুুক





অপচিন্তা

ওখানে কচুগাছ ছিল তখন। ওখানে
মুক্তা পাওয়া যেত।আমি তো পেয়েছি।
তুমি পাবে না কেন? তুমি তো পাপ করোনি।
আমার যেমন কোনও পাপ নেই, তবে
পাপবোধ আছে।আমি এখন আর
লিখতে পারছি না। এর কারণ, আমি
চিন্তা করতে পারছি না। অতীত একটা
ক্রমে সাজানো থাকে স্মৃতিতে। সেই
জন্য আমরা বলতে পারি কোন ঘটনার
পরে কোন ঘটনা ঘটেছে। সেই স্মৃতি
বিশৃঙ্খল হয়ে পড়লে তা থেকে ঘটনা
উদ্ধার করা শক্ত। যেভাবে আমি
আপাতত উদ্ধার করতে পারছি না। হয়ত
পরে পারব। নিশ্চিত নই, নিশ্চিন্ত নই।
কেন চিন্তা করতে পারছি না, এই নিয়েই
এখন আমার দুশ্চিন্তা। আমার সমস্যা
আমি কাউকে বলতে পারি না পাছে লোকে
আমাকে অস্বাভাবিক ভাবে। এই সমাজকে
ছোটবেলা থেকেই ভয় পাই, তারপরও
যেখানে যাই সেখানে গিয়ে দেখি সেখানেও
একটা সমাজ আছে। আমি সমাজকে ত্যাগ
করলেও সমাজ আমাকে ত্যাগ করে না।
এর মানে এই নয় যে সমাজ কত উদার,
কত মহান, কত গ্রহিষ্ণু। এর মানে হল
সমাজ এমন একটা পেট যার সব সময়
খাদ্য দরকার।আমি সমাজকে পরিপাক
করতে পারি না,সমাজই আমাকে
পরিপাক করে ছিবড়ে
করে ফেলে। এবার ভাবতে বসি, সমাজ
আমাকে কী কী দিয়েছে? আমি সমাজকে
কী কী দিয়েছি? ভেবে দেখেছি, সমাজ
আমাকে অস্বীকৃতি দিয়েছে এবং আমিও
সমাজকে অস্বীকৃতি দিয়েছি। সে আমাকে
ঘেন্না করেছে, আমি তাকে ঘেন্না করেছি।
এ কথা বলা নিষ্প্রয়োজন যে সমাজ মানে
কয়েকজন মানুষ নয়। তবে এই বড় সমাজের
মধ্যে আমি কয়েকজনকে নিয়ে একটা
ছোট সমাজ বানিয়ে নিতে চেয়েছি। কিন্তু
এই ছোট সমাজটাও সময় বিশেষে বড়
সমাজের মতো আচরণ করে আর তখনই
তাকে ভয় পেয়ে পরিত্যাগ করে বসি।
সমাজ একটা বাজার ছাড়া আর
কিছু নয়। প্রয়োজন হলে
যাও তার কাছে, তারপর ফিরে এসো। আর
বাজারের ধর্ম অনুযায়ী সমাজও যে
তোমাকে ঠকাবে, সেই বিষয়ে প্রস্তুত থাকা
দরকার। মানুষ সামাজিক জন্তু
—এই কথাটা একটু বাড়াবাড়ি।
মানুষের সঙ্গ দরকার, সঙ্গী দরকার,
তার মানে এই নয় যে তার সমাজ দরকার।
এই সমাজের ধর্মই হল নিজেকে ক্রমাগত
বাড়াতে বাড়াতে এগিয়ে চলা,
সবকিছু গ্রাস করা আর এইভাবে
একদিন প্রসব বেদনা ওঠে সমাজের এবং
জন্ম হয় রাষ্ট্রের। আমাদের আরও
সংগঠিতভাবে পরিপাক করার জন্য।
তোমাকে ছিবড়ে করে ফেলবার জন্য।
আমার ছিবড়ে হয়ে যেতে
আপত্তি আছে। কেননা আমি জানি,
আমি ওই কচুপাতার মতো যে নোংরা
জলকেও আলোকবিন্দু করে মাটিতে
ঝরিয়ে ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখি।



ভুলে গেছি

আমি কি এখন কিছুই পড়তে পারব না?
পড়তে গেলেই মাথা ধরে যাবে?
শব্দের ভেতরে প্রবেশাধিকার কি আমার
হারালো? তাহলে কেন অক্ষরকে কিছু
জ্যামিতিক আঁক ছাড়া আর কিছু মনে
হচ্ছে না? তবে কি অসীমের সঙ্গে সামান্য
যে-সূত্রে জুড়ে ছিলাম সেই সূত্রটুকু
ছিঁড়ে গেল? নাড়িছেঁড়া যন্ত্রণা টের পাই
এই প্রকাণ্ড রাত্রির এক প্রান্তে শুয়ে।
কেউ যেন গায়ের কাঁথাটি সরিয়ে নিয়ে
গেছে। নিজের ঘুমন্ত মুখ কখনও দেখিনি।
কে দেখেছে? গায়ের হারিয়ে যাওয়া
কাঁথায় কোন রঙের সুতোয় কী নকশা ছিল,
ভুলে গেছি। স্বপ্নে আলাদিন আসে, বলে,
'আমার জ্বিনটি তুমি ধার নেবে?' আমি
প্রত্যাখ্যান করি, 'আমার তো সুপরিচিত
সমুদ্র নেই, কোথায় পাড়ি দেব? তাছাড়া,
জ্বিনও তো এক মখলুক, ওকে ওভাবে
আটকে রেখো না, মুক্ত করে দাও, দেখো
তুমিও মুক্তি পাবে কোনও এক কালে।'
মর্জিনাকে বলেছি, মর্জিনা! তুমিও কি
সুখী নও আবদুল্লার যা আছে?
চোরের মোহর তুমি চুরি করে সুখ পাও?
শাকান্ন তোমার দেশে এতই দুর্লভ?
স্বপ্নে আমি দু'খানা দেশ আবিষ্কার করেছি।
দুই দেশ শস্যে শস্যে ভরা। সকলেই কৃষিকাজ
করে, সকলেই বস্ত্র বুনে তোলে, ধর্মগৃহ নেই
তাই তাদের সকল গানে তাদেরই উল্লেখ।
আমি তো রাতের এপার থেকে গেছি বিশিষ্ট
অন্ধকার ঠেলে, প্রশ্ন করি, 'তোমাদের
দেবদেবীরা কোথায়?' তারা বলে,
'এই দেশে মৃত্যুভয় নেই, ভয়েরও প্রয়াণ
ঘটেছে, আমাদের উপাস্য এত দূরে আছে,
ভুলে গেছি। এত কাছে আছে, ভুলে গেছি।'
যেমন আমার শব্দেরা।


মন্তব্যসমূহ

  1. ভালো লাগলো। বিশেষতঃ প্রথম কবিতার এই ভাবনাটা - সমাজ একটা বাজার ছাড়া আর কিছু নয়।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দীপঙ্কর বাগচীর কবিতা paul gauguin  ঈশ্বর ও গাধার সংলাপ   সকল কাজের কাজ, ফেলে আসে আমাদের গাধা এ জীবন ঘূর্ণমান, এ জীবন বস্তুতঃই বাধা কে তবে ফিরেছে দূরে, সন্ধ্যা সূর্যে এতো রঙ করা বিষাক্ত বীজের ক্ষেত ছুঁয়ে আছে যেভাবে পাহারা এই রাত্রি নমাজের, এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু, আছে নাকি দিনের অদূরে মানুষের মতো ঠোঁট, মানুষের মতো কেউ বসে আমার সমস্তবেলা কেটে যায় কীসের আবেশে ঋতুও যখন আসে ধস্ত হয়ে বিকারের প্রায় দূরে দূরে জ্বলে তারা, বালিকারা কোথায় হারায় দিনের ভিতরে দিন ডুবে গেলে গোলার্ধের পরে কে তবে এসেছ এই রাত্রিদিন এমন আষাঢ়ে এই রাত্রি নমাজের এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু আছে নাকি দিনের অদূরে বাতাস কচুরিপানার দেশে, এসে গেছি অবশেষে ভাঙা বাড়িটার আলো বলেছিলে সব ভালো কোন পথে তোমাকে হারাই  আমার তো কিছু নাই , অন্ধকার বনে তাই একা একা ঘুরে গেছি সব কিছু মিছি মিছি বাতাসের দোলা লেগে ,এসেছে সবাই যতো ভাবি এলোমেলো ,কুয়াশায় কারা এলো ঝোড়ো হাওয়া বুকে নিয়ে এপাড়া ওপাড়া দিয়ে উড়ে যায় টিন ছাদ ,দেখো সাঁই সাঁই তুমি বলেছ...
অরিত্র সান্যালের গুচ্ছ কবিতা  কয়েকটি লেখা                                 [ যা আমি গিলে খেয়েছি এতকাল প্রতিটি নিরুদ্দেশের অন্ধকার আমার মধ্যে আজ অনর্গল উসখুস করে কালো কালি ] ১। গর্ত থেকে পতন উপচে পড়ছে আমার বিশাল সব জাহাজ একে একে শূন্যতা গেঁজিয়ে ভেসে ওঠে মণি ঘিরে এক বন্ধ মাল্লা আমার আমার চারিদিক সম্পূর্ণ নয় এখনও ২। চার পাঁচটা অসম্পূর্ণ বাক্যের মধ্যে আছি এখন সে সব থেকে সুতো বেরিয়ে আছে হাওয়া নাড়ায় তাদের একটা পর্দা যেভাবে আমাদের ঘিরে রাখে বাইরে অনাদি শীতল কাল ৩। একটি প্রশ্নচিহ্নের আঁকশি নেমে আসে কে কে ফিরে যেতে চাও ফেলে আসা মাধ্যাকর্ষণে? খাদ থেকে এখন আমার স্বর হাউই ছুঁড়ল একটি- তারপর? জীবন অনন্ত শূন্যতায় উদ্ধৃত ৪। আমার পিছনে এখন তুমি এসে বসেছ-  শান্ত নিস্পন্দ ঝরে যাওয়া এখন শুধুই যতটুকু বয়ে নিয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস আমি তোমার না-লেখার ...
অনুবাদ কবিতা কবীরের কবিতা অনুবাদ – চৈতালী চট্টোপাধ্যায়  চৈতালীর কবীর ১ মন তো অসাধু ব্যবসায়ী। তাতে লগ্ন হয়ে আছে এক কুটিলা পত্নী আর পাঁচ-পাঁচটি বেয়াড়া সন্তান! মন,ফিরবে না। বলছে কবীর, মনে ভারী শক্ত গিঁট পড়ে গেলে, সহজে খোলে না ২ কোরানে কিংবা বেদে, এ-শিক্ষা কোথাও নেই! লাগাম লাগিয়ে মুখে, পিঠে জিন পরাও, রেকাবে পা দাও। তারপর চলা-মন, তারপর পথ,নির্জন, সোজা স্বর্গে গেছে ৩ লোভ যেন ঢেউয়ের মতো। তোমাকে ডোবাতে কিছু জল লাগে না! রাজসিংহাসনে রাজা। রানী, রূপবতী। পূজারী পণ্ডিত, কিংবা ভেল্কি-দেখানো এক যোগী। নির্জলা সমুদ্রটিতে সব ডুবে গেলো! তবে,কে জীবিত? যার মন শিলায় গ্রস্ত, কবীর জানালো ৪ তীরে বসে থাকি। নৌকো আসবে। কোথায় যাচ্ছি? স্বর্গ আদৌ আছে নাকি! ওহে নয়নপথগামি! তোমাকে সর্বত্র দেখি আমি। কবীর মিনতি করে, এ-যাত্রা দাও রেহাই! আছি বেশ, এখানেই তো আমার ঠাঁই ( কবীর অনুবাদ করেছি বটে, কিন্তু সেই আধ্যাত্মিকতা বোঝার সাধ্য আমার নেই। সেই সময়ের ভক্তি ...