যদি কিছু হ'য়ে পড়ে পাবে শেষে কষ্ট'
প্রসূন মজুমদার
কবি তুষার রায়ের নাকি একটা প্রিয় খেলা ছিল চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে টলতে টলতে রাস্তা পার হয়ে যাওয়া। এই খেলার নাম তিনি দিয়েছিলেন 'ডেথ ডেথ খেলা '। তিনি কবি ছিলেন, তাই উন্মাদনা ছিল তাঁর সহজ স্বভাব। কিন্তু মানুষ তো কবি নয়! বিশেষ করে যাকে বলে সভ্য, শিক্ষিত মানুষ! তারা কীভাবে ডেথ মানে মৃত্যুর সঙ্গে খেলা করবে! তাই করোনাসুরের আক্রমণ ঠেকাতে মানুষেরা চটপট কিছু হটস্পট খুঁজে নিয়ে আর মুখে মুখোশ গুঁজে নিয়ে স্বেচ্ছায় দেশবিদেশে তালা মেরে দিয়েছে। কেন তালা? প্রশ্নের উত্তর খুবই সহজ। ' ভাইএর সঙ্গে চিরজীবন লড়াই করে যাচ্ছি বলে কি ভাইরাসের সঙ্গেও লড়ে যেতে হবে নাকি! আর এ ভাইরাস যা সংক্রামক তাতে মানুষ মানুষের কাছে গেলেই খেল খতম। ভাইরাসের কাজকারবার কীভাবে চলে জানতে চাইলে আপনি টি. ভি - র পর্দায় চোখ রাখুন। সেখানে রাত্রিদিন ভাইরোলজিস্টদের চেনা মুখ। সব চ্যানেলে একই মুখ আর চ্যানেলি ছেনালিও এক। দেখে আপনি যে যে সিদ্ধান্তে আসতে পারেন সেগুলো একটু মেপে নিন দেখি ---
১) ভাইরোলজিস্ট বলে একধরনের জীব যে এ বঙ্গে আছে সেটা আপনি সম্ভবত এই প্রথম জানলেন।
২) এই বঙ্গে ভাইরোলজিস্ট নামক জীবটি সদ্যোজাত না লুপ্তপ্রায় প্রাণী সেটা আপনি বুঝতে পারছেন না।কারণ এখনও অবধি মাত্র খান দু-তিন এই গোত্রের প্রাণীকেই আপনি ঘুরিয়েফিরিয়ে দেখতে পাচ্ছেন।
৩) এরা যে বিপুল জ্ঞানী সে বিষয়ে আপনার কোন সন্দেহের অবকাশই নেই, কারণ এই ভাইরাস নামের আপদটার সম্পর্কে আপনি এর আগে পর্যন্ত প্রায় গণ্ডমুখ্যু ছিলেন।
৪) তাহলে ভাইরোলজিস্টদের থেকেই আপনাকে জানতে হবে।এবং আপনি জানলেন। জানলেন বলেই বুঝতে পারলেন যে আসলে কিছুই জানলেন না। এই ভাইরোলজিস্ট বলে ভাইরাস ড্রপলেট থেকে ছড়ায় তাই তার ছোঁয়ায় পোঁয়ায় বংশদণ্ড। পোঁয়ায় বংশ ঠ্যাকাতে, যাকে বলে নিজেরই বংশ নিজে রক্ষা করতে সব মুখ মুখোশে ঢাকা ভালো কিন্তু মুখোশ আঁটার দরকার এখনই নেই। মুখোশ এখন শুধু ডাক্তার আর নার্সরা পরবে।আপনি তবু ভয়টয় পেয়ে এদিকওদিক থেকে যত যা মুখোশ ছিল সব খুলে নিয়ে নিজের মুখে পরার পরেই দেখলেন টিভিতে ভাইরোলজিস্ট আপনারই দিকে তাকিয়ে খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসছে আর বলছে কাপড়ের মাস্ক পরলে বিপদ কমবে না বরং বাড়বে। ওমা! এ আবার কী কেলো! এই বলে যেই আপনি মাস্ক বর্জন কর্মসূচীতে মেতেছেন অমনি তারা বলে এবার মুখোশ আপনাকে পরতেই হবে। এখন ভাইরাস নাকি বাতাসেও অল্প-অল্প ভাসছে। এ যেন সেই 'কাল ছিল ডাল খালি।,আজ ফুলে যায় ভরে' কেস। আপনি foolএ foolএ ঢলে পড়ছেন।কিন্তু দেশের জন্যে আপনি জাগ্রত সৈনিকের মতো নিজে বাঁচা আর অপরকে বাঁচানোর অঙ্গীকারে শামলা এঁটে গামলা চড়ে বসে আছেন। আর ভাইরোলজিস্টের ভাইরাল ডিগবাজি দেখে নিতি নিতি শিহরিত হচ্ছেন।
৩) এই ভাইরোলজিস্টদের বয়ান পাল্টানোর গতিবিধি দেখে আপনি সহজেই বুঝে ফেলবেন যে এরা তা-ই বলে যা এদের বলতে বলা হয়,বা রাষ্ট্র এদের বলতে বাধ্য করে। কারণ যখন মাস্কের জোগান ছিল না তখন এরা বলেছিল 'আমরা স্টেজ টু-তে, এখনও গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়নি।তাই মাস্ক পরা হাস্যকর। এখন যেই যথেষ্ট মাস্ক তৈরি হওয়া শুরু হয়েছে অমনি তারা মাস্ক বাধ্যতামূলক করার পক্ষে মতামত দিচ্ছে। এবারে কথা হল যে, তাহলে তো যুক্তিক্রমে বলতে হয় আমরা এখন করোনাসংক্রমনের স্টেজ থ্রিতে আছি। কিন্তু রাষ্ট্রের দাবড়ানি এমনই সেটাও এই ভাইরোলজিস্ট নামের পোষা জীবরা বলতে পারছে না। তারা আমতাআমতা করে বলছে যে 'আমরা স্টেজ ২ আর ৩ এর মাঝামাঝি আছি'।অর্থাৎ তাদের কথামতো আমরা এখন সোনারপাথরবাটিতে কাঁঠালেরআমসত্ত্ব খাচ্ছি।
৪) এইসমস্ত শেষে আপনি এই ভাইরোলজিস্টের কাছে জানতে চান কবে আর কীভাবে এই ভাইরাস যাবে? তারা জানে না। ভাইরাসের আগাপাছতলা সব নাকি তারা জানে কিন্তু এই ভাইরাসের কিচ্ছু জানে না।কিচ্ছু জানে না কিন্তু জানে যে এরা কীভাবে ছড়ায়, কীভাবে ছড়ায় জানে কিন্তু জানে না এরা অন্যভাবে ছড়াতেও পারে কিনা।
এইসব ভাবতে ভাবতে আপনি সত্যজিৎ রায়ের হরুর মতো সরু হয়ে যেতে বাধ্য। মামারা অতঃপর আপনাকে পাকিয়ে রাখবে। মামারা এখন দেশের সামনের সারির সৈনিক। তারা আপনার চামড়া খুলে নিতে পারে,কান ধরে উঠবোস করাতে পারে কিন্তু আপনাকে তাদের আদেশ মেনে চলতেই হবে। দেশকে রক্ষা করতে গেলে আপনাকে ভদ্রছেলের মতো পেটে তিন কিল মেরে নাকে তপ্ত ইঁটের শক্ত ঝামা ঘসতে থাকতে হবে। আর এতকিছুর পরেও যদি করোনা আপনাকে খুঁজে পেয়ে যায়? ভয় নেই দেশের হাতে এত কিট নেই যে আপনার মতো গরীব কীটকে টেস্ট করে দেখবে। আপনার কি এত বড় স্ট্যাটাস যে আপনি কখনও বিদেশে গেছেন!কিংবা আপনি কি এতটাও উঁচু যে কোনো বিলেতফেরতের গায়ে গা ঘষার সুযোগ পেয়েছেন!তবে? তবে আপনার করোনা হতেই পারে না।জানি আপনি ভাবছেন,এই রে আমাদের ভাইরোলজিস্ট যে বলল ভাইরাস এখন বাতাসেও একটু একটু উড়ছে! তা যদি কোনো বিলেতফেরত মহাপুরুষ আপনার কাছ ঘেঁষে শ্বাস ফেলে যায় তবে তো আপনারও করোনাকাঁটা ফুটতে পারে! কিন্তু না, আবার ভুল করেছেন। আজিব চিজ হ্যায় ইয়ে ভাইরোলজিস্ট!এদের কথায় কান দেবেন ততটা যতটা সরকার আপনাকে দিতে বলেছে।কারণ আপনার, আমার,আর মহান ভাইরোলজিস্ট, সকলের কানই সরকারের হাতে।অতএব ভোট থেকে ভাইরাস সব সিদ্ধান্তই শেষঅবধি সরকারের হাতে। তাই বিজ্ঞানের মহাসাধকদের দেখলে চিরকালই বেশ মজা লাগে। এই করোনার সঙ্গে ডেথ ডেথ খেলায় ভাইরোলজিস্ট নামের চ্যানেল-বিজ্ঞানীদের প্যানেল দেখলে আমার প্রাণে ফুর্তি আর ধরে না।
যাই হোক, আমার এই ধানাইপানাই পড়ে ভুলেও যেন আপনারা পিছনপানে তাকাবেন না, মানে যাকে বলে আর কি, প্রভাবিত হয়ে পড়বেন না। করোনার কুমড়োপটাশ জানতে পেলে নয়তো আপনাদের ঠেলা বুঝিয়েই ছাড়বে। তখন দেখবেন হয়তো এই ভাইরোলজিস্ট নামের বকচ্ছপদের কোন কথাটা কেমন করে ফলছে। সুতরাং তখন শুধু নয় এখনও আপনাদের জন্য সাবধানবাণীটা মনে করিয়ে যাই।এই সাবধানবাণী যদিও বহুদিন আগেই আমাদের সুকুমারী ভাবনায় ভেসেছিল তবু আজকে দাদা যাবার আগে মনে করিয়ে দিয়ে যাই ---
'আরে আরে, ওকি কর প্যালারাম বিশ্বাস?
ফোঁস ফোঁস অত জোরে ফেলোনাকো নিশ্বাস।'
দারুণ
উত্তরমুছুন