সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অনির্বেদ পান্ডার কবিতা 








পতঙ্গ জীবনের আবছায়া থেকে কয় মুহুর্ত




১.

গোপন বৃষ্টি আঁচলে লুকিয়ে, চলেছ তুমি
অন্য শহরে আজ
লম্বা কোট সাথে নিও
তুষার ঝরে ও পথে;
ছিঁড়ে দিলাম কয়েকটি পাতা
সঙ্গে নিও, সঙ্গে থাক
যদি প্রয়োজন একান্ত দ্বৈরথে।

আগামীর শহরগুলিতে কিভাবে নিঃশ্বাস নেয়
কিভাবে সবাই বলে 'ভালোবাসি'
কাদের রক্তে কোথায় পালন মানুষের উৎসব
হাস্যকর জ্যোৎস্নার নীচে
কিছুই জানো না তুমি

তবুও যাত্রা হোক
তবুও যাত্রা আজ
গোপন বৃষ্টি আঁচলে লুকিয়ে পা রাখো সে পথে
যে পথ এখনও শোনেনি বৃষ্টির আওয়াজ...


২.

অদ্ভূত সূর্য এক ভেসে ওঠে রাতের আকাশে
এতটুকু পথ আর
ক্লান্ত তারার চাদর জড়িয়ে নিমেষেই পার হতে পার তুমি
নিমেষেই ছুঁয়ে ফেলতে পার
ইতস্তত উড়তে থাকা ঝলমলে অক্ষরঝাঁক
তবু, বিগত অনেক রাতের মতোই
নিয়মমাফিক, হাওয়া বয়ে আসে ধীরে
চৌকাঠের এপাশে শান্ত, বসে থাকো তুমি
শূন্য শাদা কাগজের কাছে,
অনন্ত, ব্যর্থ প্রতীক্ষায় -

পতঙ্গের দীর্ঘ ছায়া কেঁপে কেঁপে ওঠে ঘরে


৩.

অতীতের কাহিনীরা দল বেঁধে এলো আক্রমণে
তুমি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লে খামখাই
ফিরবে না আর, এই ঠিক করে -
একে একে হেঁটে পার হলে শহর
আর শহরের পর আরও আরও শহর;
অগণিত মানুষ দেখলে
অসংখ্য নির্বোধ মানুষ, আর
প্রত্যেকটি মানুষের মুখে প্রতিফলিত নিজের মুখ।

এইভাবে হেঁটে চললে কত চাঁদ কেউ জানে না
ক্ষয়ে গেল সাতপাটি সোনার, রুপোর, লোহার জুতো
ছিঁড়ে গেল সাতজোড়া সোনার, রুপোর, লোহার টুপি
ভেঙে গেল সাত সাতটা সোনার, রুপোর, লোহার লাঠি
একপেয়ে মুরগির ঘরে জাদু-চরকা কাটতে কাটতে
প্রতীক্ষায় বুড়িয়ে গেলেন ত্রিকালজ্ঞ ডাইনি-বাবা

তারপর একদিন, অযথাই পেছন ফিরে তাকালে তুমি
অতীতকে হাস্যকর মনে হলো...


৪.

তুমি কি সবার মতো সুস্থ নও?
হৃদয়ের কালো থেকে নিখাদ, বেরং এক সাপ
চক্রাকারে উঠে আসে মগজশিলায়
নিজস্ব গোপন নাম হস্তান্তর করবে বলে
অথচ বালক কই?
যে বালক মুখে তুলে নেবে নিষিদ্ধ ফল
প্রশ্ন করবে, জানবে - প্রশ্ন করা অপরাধ?
তুমি কি এখনও ভারসাম্য হারিয়ে ফেল নি?
কঠিন দাঁতের নীচে পিষতে থাকা তোমার ছোটবেলা
তুমি ঘুষি মারতে চলেছ আয়নার দিকে
প্রতিবিম্বের নাকমুখ দিয়ে ঝরে পড়ছে রক্ত
তোমার প্রতি নিঃশ্বাসে শুধু অগুনতি কাঁচ
শিথিল হাতের দিকে চেয়ে হেসে চলেছে
সুস্থ নও তুমি।

বারবার কাউন্সিলরের চেম্বার ভয়াবহ স্বপ্নে
তোমাকে স্বাভাবিক দুনিয়ার দিকে ঠেলে নিয়ে গেছে

প্রতিটি কাহিনীকে তুমি
সূর্য ওঠার আগেই
নিজস্ব ট্র্যাজেডিতে পরিণত করেছ।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অরিত্র সান্যালের গুচ্ছ কবিতা  কয়েকটি লেখা                                 [ যা আমি গিলে খেয়েছি এতকাল প্রতিটি নিরুদ্দেশের অন্ধকার আমার মধ্যে আজ অনর্গল উসখুস করে কালো কালি ] ১। গর্ত থেকে পতন উপচে পড়ছে আমার বিশাল সব জাহাজ একে একে শূন্যতা গেঁজিয়ে ভেসে ওঠে মণি ঘিরে এক বন্ধ মাল্লা আমার আমার চারিদিক সম্পূর্ণ নয় এখনও ২। চার পাঁচটা অসম্পূর্ণ বাক্যের মধ্যে আছি এখন সে সব থেকে সুতো বেরিয়ে আছে হাওয়া নাড়ায় তাদের একটা পর্দা যেভাবে আমাদের ঘিরে রাখে বাইরে অনাদি শীতল কাল ৩। একটি প্রশ্নচিহ্নের আঁকশি নেমে আসে কে কে ফিরে যেতে চাও ফেলে আসা মাধ্যাকর্ষণে? খাদ থেকে এখন আমার স্বর হাউই ছুঁড়ল একটি- তারপর? জীবন অনন্ত শূন্যতায় উদ্ধৃত ৪। আমার পিছনে এখন তুমি এসে বসেছ-  শান্ত নিস্পন্দ ঝরে যাওয়া এখন শুধুই যতটুকু বয়ে নিয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস আমি তোমার না-লেখার ...
দীপঙ্কর বাগচীর কবিতা paul gauguin  ঈশ্বর ও গাধার সংলাপ   সকল কাজের কাজ, ফেলে আসে আমাদের গাধা এ জীবন ঘূর্ণমান, এ জীবন বস্তুতঃই বাধা কে তবে ফিরেছে দূরে, সন্ধ্যা সূর্যে এতো রঙ করা বিষাক্ত বীজের ক্ষেত ছুঁয়ে আছে যেভাবে পাহারা এই রাত্রি নমাজের, এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু, আছে নাকি দিনের অদূরে মানুষের মতো ঠোঁট, মানুষের মতো কেউ বসে আমার সমস্তবেলা কেটে যায় কীসের আবেশে ঋতুও যখন আসে ধস্ত হয়ে বিকারের প্রায় দূরে দূরে জ্বলে তারা, বালিকারা কোথায় হারায় দিনের ভিতরে দিন ডুবে গেলে গোলার্ধের পরে কে তবে এসেছ এই রাত্রিদিন এমন আষাঢ়ে এই রাত্রি নমাজের এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু আছে নাকি দিনের অদূরে বাতাস কচুরিপানার দেশে, এসে গেছি অবশেষে ভাঙা বাড়িটার আলো বলেছিলে সব ভালো কোন পথে তোমাকে হারাই  আমার তো কিছু নাই , অন্ধকার বনে তাই একা একা ঘুরে গেছি সব কিছু মিছি মিছি বাতাসের দোলা লেগে ,এসেছে সবাই যতো ভাবি এলোমেলো ,কুয়াশায় কারা এলো ঝোড়ো হাওয়া বুকে নিয়ে এপাড়া ওপাড়া দিয়ে উড়ে যায় টিন ছাদ ,দেখো সাঁই সাঁই তুমি বলেছ...
পূর্বা মুখোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা    ইতিবৃত্ত, ইতিবৃত্ত নয়...                  আঁচ ------- মরা অক্ষরের গায়ে যতটুকু প্রাণ, ততটুকু প্রেম। আমি আর ততোধিক নই। বাতাস ফুরিয়ে গেলে সর্বস্ব সমেত উবে যাব। ফেলে যাব দুটিমাত্র বই - 'ইতিবৃত্ত'।' ইতিবৃত্ত নয়'। ওরা কোনও পাঠক পাবে না। কড়াই --------- নেভা আগুনের আঁচ গসগসে হয়। উনুনের দূরছাই জ্বর। বাবা কি ওষুধ দেবে?রাত্তিরে উনোন ঘুমোবে? নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবে কয়েকটা বছর? উনুন না জ্বেলে আমি কোনওদিন লিখতে  পারিনি। পালতেই পারিনি এই সামান্য জীবন ! 'এইসব সাময়িক উত্তেজনা ' উনি বলতেন। উনি, মানে শিয়রে শমন, আমি যাতে লেখাপত্র সুসিদ্ধ করতাম। অলীক ----------- রাত্রি একটার পর ঘড়ির কাঁটারা তীব্র হয় শ্বাসাঘাত গুণে গুণে লিখি জল দাও জল দাও জল দাও আমার শেকড়ে... জানলায় পর্দা ওড়ে, দেয়ালে তেষ্টার ছায়া পড়ে ঝুরিনামা শায়িত গাছের। দুহিতা --------- ধূপছায়া মেয়ে আহা ধূপছায়া মায়ের সন্তান পিছু পিছু দু পা হাঁটে, দু আঙুলে আঁচল জড়ায়। 'ও কি রে মা !  ভয় পাস ? আয় দেখি, কাছে ...