সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তৌহীদা ইয়াকুবের কবিতা 







রূপান্তর

অজানা দিন এসে জাপ্টে ধরে বসে যায়
পুরাতনী রোদে।
পৃথিবীর রুপান্তর-সময় মহা যজ্ঞের মতো,
পাশাপাশি পড়ে থাকে
নিদালির ঘোর নিয়ে অসার অলসতা।
জানা অজানায় জাগতিক আবর্তে
সরল ও গরল সম্ভাষণ
আহত করে প্রাচীন অভিমান।

বৃত্তস্থ খরতা বিভক্ত করে জীবনের ধারাপাত ।
তারপর একে একে
নির্জন নিঃসঙ্গ মন খারাপের বিপন্ন সময়
গিলে নেয় যাবতীয় আলো ,
দিগন্তে ছড়ানো হিরেকুচি বৈভব।

মুখস্ত রাত্রি-দিন

অন্ধকার ও স্তব্ধতায় জন্মালো যে অনুভব
ভুলে যেতে হয় তাকে ।

সূক্ষ্মতম অনুনাদ প্রতিদিন বিদ্ধ করে যত
তারচেয়ে বেশী বৃত্যস্থ কটাক্ষের বাঁজখাই শব্দ দূষণ।

বিসর্জনের সুর শুধুই কোলাহল
তাতে ছেড়ে যেতে হয় উন্মুখ দিগন্ত
নোনা জল , কুড়োনো ঝিনুক।

এই সব মুখস্ত দিন রাতের ভিতর
বাদামি খড়ের পাখি
স্বপ্নের নিপুণ বুনন নিয়ে আসে যদি
আমাদের ভেবে নিতে হয় -
আলোর মুখোশ মানে প্রকট আন্ধকার। তবুও -

রূপান্তর অনায়াসে আমাদের বিভ্রান্ত করে।

আমাদের যৌথ দিন

প্রায়ই আমাদের যৌথ দিন অসুখে পরে,
তুমি সুস্থ আয়ুর ধারনা নিয়ে,
জানালায় রোদ-হাওয়ার তাবিজ ঝুলিয়ে রাখো।

আমাদের সুখী পারিবারিক পটভূমি দূর বন্ধুর কাছে দুর্বোধ্য ঠেকে।
কতটা কুয়াশা জড়ানো অন্ধকার
আর অন্ধকার জড়ানো উৎসবের ঝালোরে
কেটে গেছে রাত জাগা বাজেয়াপ্ত বাসর।
এইসব গল্প পৃথিবীতে প্রেমহীম মন্নন্তর টেনে আনে।
প্রসঙ্গ পাল্টে নিয়ে আরো কিছু পথ হেঁটে যেতে পারো।
সহমতে ও আশ্বাসে পাশ থেকে বদলে গেছে হাজারো মুখোশ
এবং বলে যাওয়া গল্পের পর মরে যায় বারোয়ারি আত্মিয়তা।

আমাদের কয়েকটা দিন রোদে পুড়ে গেছে ,
কয়েকটা দিন জমে গেছে হিমাঙ্কের নিচে।
অথচ কেটে গেছে , কেটে যায় হে -
এখন সমুলে উঠে আসে ছায়া সমেত
জড়িয়ে থাকার হিম অবসর।
শুধু প্রেমময় সুধা দৃশ্যে
আমাদের কত কত দিন মনে পড়ে।

অবেলা

এখন ক্রমশ রোদ-তাপ আর
বেড়ে যাওয়া দিনের পরিধিতে
ঝড়-জল বিরতির প্রচারিত খবর।
তার পাশে পরে থাকা এক পর্ব সময় 
কবিতার বিপুল বৈভবে ছুঁয়ে যায় আমার অবেলা।
প্রাণপণ ধরে রাখি, রেখে দিতে চাই
ভিখিরি মত দৈন্যের দায় নিয়ে-
দেখি পার্কের বেঞ্চি থেকে উঠে
চলে যায় পড়ন্ত বিকেল।

বাসনা

অজুহাত ভাল দেখায় না
অতৃপ্তির ধোঁয়া কুয়াশায় ঝুলে থাকে 
প্রতিদিন উনোনের ঘুম আগুনের উৎসমুখ দেখবে বলে
কফিশপ ঘুরে আসে।
ক্যালেন্ডারে আগামি উৎসব খুঁজি।

তোমাকে বলা হয় নি
তাই অবেলায় প্রসাধন ,যত্নের রূপটান,
ঘুরে ফিরে আয়না।


হে দূর

একটা অচেনা রাস্তা দেখিয়ে
বলেছিলে চল -
অভ্যস্ততা আমাকে তার খাঁচে ভরে রাখে।

নির্জন নিঃসঙ্গ মন খারাপের দিনে 
অনুতাপ শুধুই স্মৃতির পরিক্রমা এনে
ফিরে যায় শুভাকাংখ্যায়।

আধিভৌতিক কোন শব্দের মত অন্ধকারে
অজানা দীর্ঘশ্বাস অপেক্ষার গল্প বলে যায়
অলৌকিক সুরে।

হে দূর , 
আশ্চর্য আলোর মত হেসে
ক্ষমার প্রশ্রয়ে থেকো প্রবণতা হয়ে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অরিত্র সান্যালের গুচ্ছ কবিতা  কয়েকটি লেখা                                 [ যা আমি গিলে খেয়েছি এতকাল প্রতিটি নিরুদ্দেশের অন্ধকার আমার মধ্যে আজ অনর্গল উসখুস করে কালো কালি ] ১। গর্ত থেকে পতন উপচে পড়ছে আমার বিশাল সব জাহাজ একে একে শূন্যতা গেঁজিয়ে ভেসে ওঠে মণি ঘিরে এক বন্ধ মাল্লা আমার আমার চারিদিক সম্পূর্ণ নয় এখনও ২। চার পাঁচটা অসম্পূর্ণ বাক্যের মধ্যে আছি এখন সে সব থেকে সুতো বেরিয়ে আছে হাওয়া নাড়ায় তাদের একটা পর্দা যেভাবে আমাদের ঘিরে রাখে বাইরে অনাদি শীতল কাল ৩। একটি প্রশ্নচিহ্নের আঁকশি নেমে আসে কে কে ফিরে যেতে চাও ফেলে আসা মাধ্যাকর্ষণে? খাদ থেকে এখন আমার স্বর হাউই ছুঁড়ল একটি- তারপর? জীবন অনন্ত শূন্যতায় উদ্ধৃত ৪। আমার পিছনে এখন তুমি এসে বসেছ-  শান্ত নিস্পন্দ ঝরে যাওয়া এখন শুধুই যতটুকু বয়ে নিয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস আমি তোমার না-লেখার ...
অনির্বেদ পান্ডার কবিতা  পতঙ্গ জীবনের আবছায়া থেকে কয় মুহুর্ত ১. গোপন বৃষ্টি আঁচলে লুকিয়ে, চলেছ তুমি অন্য শহরে আজ লম্বা কোট সাথে নিও তুষার ঝরে ও পথে; ছিঁড়ে দিলাম কয়েকটি পাতা সঙ্গে নিও, সঙ্গে থাক যদি প্রয়োজন একান্ত দ্বৈরথে। আগামীর শহরগুলিতে কিভাবে নিঃশ্বাস নেয় কিভাবে সবাই বলে 'ভালোবাসি' কাদের রক্তে কোথায় পালন মানুষের উৎসব হাস্যকর জ্যোৎস্নার নীচে কিছুই জানো না তুমি তবুও যাত্রা হোক তবুও যাত্রা আজ গোপন বৃষ্টি আঁচলে লুকিয়ে পা রাখো সে পথে যে পথ এখনও শোনেনি বৃষ্টির আওয়াজ... ২. অদ্ভূত সূর্য এক ভেসে ওঠে রাতের আকাশে এতটুকু পথ আর ক্লান্ত তারার চাদর জড়িয়ে নিমেষেই পার হতে পার তুমি নিমেষেই ছুঁয়ে ফেলতে পার ইতস্তত উড়তে থাকা ঝলমলে অক্ষরঝাঁক তবু, বিগত অনেক রাতের মতোই নিয়মমাফিক, হাওয়া বয়ে আসে ধীরে চৌকাঠের এপাশে শান্ত, বসে থাকো তুমি শূন্য শাদা কাগজের কাছে, অনন্ত, ব্যর্থ প্রতীক্ষায় - পতঙ্গের দীর্ঘ ছায়া কেঁপে কেঁপে ওঠে ঘরে ৩. অতীতের কাহিনীরা দল বেঁধে এলো আক্রমণে তুমি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লে খামখাই ফিরবে না আর, এই ঠিক করে - একে একে হেঁটে...
পূর্বা মুখোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা    ইতিবৃত্ত, ইতিবৃত্ত নয়...                  আঁচ ------- মরা অক্ষরের গায়ে যতটুকু প্রাণ, ততটুকু প্রেম। আমি আর ততোধিক নই। বাতাস ফুরিয়ে গেলে সর্বস্ব সমেত উবে যাব। ফেলে যাব দুটিমাত্র বই - 'ইতিবৃত্ত'।' ইতিবৃত্ত নয়'। ওরা কোনও পাঠক পাবে না। কড়াই --------- নেভা আগুনের আঁচ গসগসে হয়। উনুনের দূরছাই জ্বর। বাবা কি ওষুধ দেবে?রাত্তিরে উনোন ঘুমোবে? নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবে কয়েকটা বছর? উনুন না জ্বেলে আমি কোনওদিন লিখতে  পারিনি। পালতেই পারিনি এই সামান্য জীবন ! 'এইসব সাময়িক উত্তেজনা ' উনি বলতেন। উনি, মানে শিয়রে শমন, আমি যাতে লেখাপত্র সুসিদ্ধ করতাম। অলীক ----------- রাত্রি একটার পর ঘড়ির কাঁটারা তীব্র হয় শ্বাসাঘাত গুণে গুণে লিখি জল দাও জল দাও জল দাও আমার শেকড়ে... জানলায় পর্দা ওড়ে, দেয়ালে তেষ্টার ছায়া পড়ে ঝুরিনামা শায়িত গাছের। দুহিতা --------- ধূপছায়া মেয়ে আহা ধূপছায়া মায়ের সন্তান পিছু পিছু দু পা হাঁটে, দু আঙুলে আঁচল জড়ায়। 'ও কি রে মা !  ভয় পাস ? আয় দেখি, কাছে ...