সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান


সৌভিক বসুর কবিতা













বাঘ

মেঘেদের চুল থেকে খসে পড়া বাজ 
ঘুমন্ত মাটির বুকে রেখে যায় দাগ 
যেন এক ডোরাকাটা ছোট্ট চিতাবাঘ 
আহত মায়ের পাশে তুলেছে আওয়াজ




জানলা 

কাউকে না জানিয়ে দেখো, একটা রামধনু ভেসে উঠছে 

সকাল থেকে একটা মাছি আমাকে ঘিরে গান গাইছে, এইমাত্র 
একটা এম্বুলেন্স মৃতদেহ সমেত পাড়া ছেড়ে চলে গেলো...
একশো দিনের ওপর হয়ে গেলো, বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে থেকে থেকে
    দেখো, কেমন সরীসৃপ হয়ে গেছি

এখন চোখ বুজলেই দেখতে পাই- 
একটা লোক চীন-ভারত সীমান্তের উপরে দাঁড়িয়ে সৈন্যদের ফুল বিক্রি করছে,
আর, তার পায়ের কাছে জড়ো করে রাখা আছে কয়েকশো মিসাইল 

বহুদিন হয়ে গেলো আমি কোথাও বেড়াতে যাইনি, সারা পৃথিবী জুড়ে 
পশু পাখিদের এখন সামার ভ্যাকেশন চলছে...
আজ দুপুরবেলা একজন ফলওয়ালা একটাই মাত্র আম নিয়ে এসেছিল বাড়ির সামনে 

ফেসবুকের নীল রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে কয়েকজন  কবি আধ্যাত্মবাদ দিয়ে চিৎকার করে 
সারারাত ধরে...
আমি চুপচাপ শুয়ে থাকি আর গুনগুন করি
 ' Where have all the flowers gone ‘ 

দূরের বাড়িগুলোকে আমগাছ বটগাছ ভেবে ছবি আঁকি আর দেখি
একটা পাখি, বিকেলের রামধনু পার করে কোথাও একটা চলে যাচ্ছে
একটা এম্বুলেন্স ঢুকে পড়ছে কাউকে না জানিয়ে , আমাদের মনের ভেতরে...






প্রজাপতি

একটা সাদা প্রজাপতি তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে,  দেখো, হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো... 

আমি শুয়ে শুয়ে জঙ্গল আর পাহাড়ের কথা ভাবি 

এই পৃথিবীতে আর কোনো রহস্য অবশিষ্ট নেই 
সারাদিন একটানা বৃষ্টি হয়ে গেলো... 

আমি অনুমান করতে পারি, তোমার প্রিয় রঙ সাদা আর স্বপ্নের ভেতরে তুমি 
চুপ করে তারাদের দেখো- 

আজ ভোরের বাজারে একটা লোক হঠাৎ পাগল হয়ে গেলো 
ছোটবেলার বন্ধু শুভাশীষ ছেড়া ঘুড়ির মতো বহুদূরে ভেসে গেছে

আমি দেখেছি, বৃষ্টির দিনে ফুল আর  মেঘের ভেতরে কোনো তফাৎ থাকেনা

কারা যেন সকাল থেকে আত্মহত্যা নিয়ে কথা বলছে চায়ের দোকানে 
আমার কুয়াশা জড়ানো হাত ধীরেধীরে সব কিছু স্পষ্ট করে দেবে

একটা পাখি উড়তে উড়তে বৃষ্টিতে মিলিয়ে গেলো... 

অন্ধকারে ঘুঙুর বেজে ওঠে 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দীপঙ্কর বাগচীর কবিতা paul gauguin  ঈশ্বর ও গাধার সংলাপ   সকল কাজের কাজ, ফেলে আসে আমাদের গাধা এ জীবন ঘূর্ণমান, এ জীবন বস্তুতঃই বাধা কে তবে ফিরেছে দূরে, সন্ধ্যা সূর্যে এতো রঙ করা বিষাক্ত বীজের ক্ষেত ছুঁয়ে আছে যেভাবে পাহারা এই রাত্রি নমাজের, এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু, আছে নাকি দিনের অদূরে মানুষের মতো ঠোঁট, মানুষের মতো কেউ বসে আমার সমস্তবেলা কেটে যায় কীসের আবেশে ঋতুও যখন আসে ধস্ত হয়ে বিকারের প্রায় দূরে দূরে জ্বলে তারা, বালিকারা কোথায় হারায় দিনের ভিতরে দিন ডুবে গেলে গোলার্ধের পরে কে তবে এসেছ এই রাত্রিদিন এমন আষাঢ়ে এই রাত্রি নমাজের এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু আছে নাকি দিনের অদূরে বাতাস কচুরিপানার দেশে, এসে গেছি অবশেষে ভাঙা বাড়িটার আলো বলেছিলে সব ভালো কোন পথে তোমাকে হারাই  আমার তো কিছু নাই , অন্ধকার বনে তাই একা একা ঘুরে গেছি সব কিছু মিছি মিছি বাতাসের দোলা লেগে ,এসেছে সবাই যতো ভাবি এলোমেলো ,কুয়াশায় কারা এলো ঝোড়ো হাওয়া বুকে নিয়ে এপাড়া ওপাড়া দিয়ে উড়ে যায় টিন ছাদ ,দেখো সাঁই সাঁই তুমি বলেছ...
অরিত্র সান্যালের গুচ্ছ কবিতা  কয়েকটি লেখা                                 [ যা আমি গিলে খেয়েছি এতকাল প্রতিটি নিরুদ্দেশের অন্ধকার আমার মধ্যে আজ অনর্গল উসখুস করে কালো কালি ] ১। গর্ত থেকে পতন উপচে পড়ছে আমার বিশাল সব জাহাজ একে একে শূন্যতা গেঁজিয়ে ভেসে ওঠে মণি ঘিরে এক বন্ধ মাল্লা আমার আমার চারিদিক সম্পূর্ণ নয় এখনও ২। চার পাঁচটা অসম্পূর্ণ বাক্যের মধ্যে আছি এখন সে সব থেকে সুতো বেরিয়ে আছে হাওয়া নাড়ায় তাদের একটা পর্দা যেভাবে আমাদের ঘিরে রাখে বাইরে অনাদি শীতল কাল ৩। একটি প্রশ্নচিহ্নের আঁকশি নেমে আসে কে কে ফিরে যেতে চাও ফেলে আসা মাধ্যাকর্ষণে? খাদ থেকে এখন আমার স্বর হাউই ছুঁড়ল একটি- তারপর? জীবন অনন্ত শূন্যতায় উদ্ধৃত ৪। আমার পিছনে এখন তুমি এসে বসেছ-  শান্ত নিস্পন্দ ঝরে যাওয়া এখন শুধুই যতটুকু বয়ে নিয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস আমি তোমার না-লেখার ...
অনুবাদ কবিতা কবীরের কবিতা অনুবাদ – চৈতালী চট্টোপাধ্যায়  চৈতালীর কবীর ১ মন তো অসাধু ব্যবসায়ী। তাতে লগ্ন হয়ে আছে এক কুটিলা পত্নী আর পাঁচ-পাঁচটি বেয়াড়া সন্তান! মন,ফিরবে না। বলছে কবীর, মনে ভারী শক্ত গিঁট পড়ে গেলে, সহজে খোলে না ২ কোরানে কিংবা বেদে, এ-শিক্ষা কোথাও নেই! লাগাম লাগিয়ে মুখে, পিঠে জিন পরাও, রেকাবে পা দাও। তারপর চলা-মন, তারপর পথ,নির্জন, সোজা স্বর্গে গেছে ৩ লোভ যেন ঢেউয়ের মতো। তোমাকে ডোবাতে কিছু জল লাগে না! রাজসিংহাসনে রাজা। রানী, রূপবতী। পূজারী পণ্ডিত, কিংবা ভেল্কি-দেখানো এক যোগী। নির্জলা সমুদ্রটিতে সব ডুবে গেলো! তবে,কে জীবিত? যার মন শিলায় গ্রস্ত, কবীর জানালো ৪ তীরে বসে থাকি। নৌকো আসবে। কোথায় যাচ্ছি? স্বর্গ আদৌ আছে নাকি! ওহে নয়নপথগামি! তোমাকে সর্বত্র দেখি আমি। কবীর মিনতি করে, এ-যাত্রা দাও রেহাই! আছি বেশ, এখানেই তো আমার ঠাঁই ( কবীর অনুবাদ করেছি বটে, কিন্তু সেই আধ্যাত্মিকতা বোঝার সাধ্য আমার নেই। সেই সময়ের ভক্তি ...