সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান


শুভদীপ মৈত্রর কবিতা 



ছবিঃ গুগুল











চিলিতে, প্রকাশ্যে



দূরের আগুনে হাত সেঁকে জানি লাভ নেই
তবু আগুন এসময়ে যেখানে যেদিকে জ্বলে,
                               চোখ পড়ে।
ভাল লাগে যারা উল্লাসে জ্বালায়, পোড়ায়,
এই যদি শেষ হওয়া হয়, শেষ হওয়া উদযাপন করে।
প্রকাশ্য রাস্তায় গাড়ি ও আসবাব
হিসেবের খাতা ভরা দেরাজ ও চার্চের কালো অর্গান 
পোড়াতে পোড়াতে তাদের কানে ‘ইয়োরিকা’ বাজে,
চৌমাথায় খানদানি চেয়ারে ঠ্যাঙ তুলে 
শেষ রাতের মোচ্ছব থেকে লোটা ওয়াইন ও গেলাস
                   তুলে আমাদের জানায় – চিয়ার্স। 
তার আগে তুমুল তুমুল পিটিয়ে গেছে আইনি সন্ত্রাস
আইরন ম্যানের পোশাকের থেকে বেরিয়েছে 
জলের গোলা, কান্না ও স্নায়ুর গ্যাস ভলকে ভলকে
তবু এর রাস্তা ছাড়েনি, কতগুলো ‘সন্ত্রাসবাদী’
মুখোশে, কালো চশমায়, হুল ডাকা চিৎকারে
                            – আশ্চর্য সুপার ভিলেন।

তবু এই আঁচ আমার নয়। নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।
বুড়ো চেয়ার বলল, বিপ্লব উল্লাস নয়
হা!পানি টানা প্রগতি-পত্রিকা ভ্রু কোঁচকাল
কফি হাউজের উত্তরীয়-পরা লেখকেরা
আড়চোখে চেয়ে দেখল – এসব আপদ 
          এখানে আবার ফিরে আসবে না তো!
দেড়-লাখি কপিরাইটার ভাবল – এই তো সুযোগ 
মিলিয়ে দেওয়া যাক ওয়াইনে বিপ্লবে,
যেমন ভেবেছিল নাট্যকার এই বেচে গ্রান্ট পাওয়া যাবে।

আর ‘শিরা-কাটা লাতিন আমেরিকা’ ভিজছিল
রক্তের স্রোতে। তবু কি ছটফট করছিল না প্রসব বেদনায়?
ওই যে গুলি বেঁধা হাতের উল্কি বলে গেল 
ভাবনা তবু বুলেট অক্ষত!
ওই যে পাথর ছোঁড়া কব্জিও বলে উঠল 
ভাবনা তবু বুলেট অক্ষত!
ওই যে বুড়িটার লাথিতে কুপোকাত হল পুলিশ বাবাজি
আর সংসদ ভবনের ওপড়ানো বাগানে ট্যাঙ্গো নাচল ট্র্যানির দল
ভাবনা তবু বুলেট অক্ষত!
চিলি – সিনেমা নয়, উপন্যাস কবিতা নয়, 
ভ্যালপ্যারাইসোর বন্দর থেকে 
ভাসিয়ে দাও এই উল্লাসের আর উদযাপনের ডাক
ভাবনা তবু বুলেট অক্ষত!


প্রকাশ্য অনন্ত মিছিল 


পেঁয়াজ সভ্যতার থেকে রসুন সভ্যতার দিকে 
এই যে তুমি চলেছ – আনাজপত্তরের
দামের ওঠাপড়া গায়ে লাগছে না আর,
কারণ তুমি জেনে গেছ যাই হয়ে যাক
তোমার অস্তিত্বের দাম কানা-কড়িও নয়।
তুমি আসলে ওই পোশাকের দোকানের ন্যাংটো পুতুল
একেকটা উল্লাস-বাহিনী এসে ঘিরে ধরে – 
কখনো মাজা ঝুঁকিয়ে কখনো নাক কান মুলে
গেরুয়া সবুজ নীল ইচ্ছে মতো কাপড় পরায়,
সেই মতো বেচা কেনা শেষ হলে
ফেলে চলে যায় – উলঙ্গ, বাঁকা কিমাকার।
তুমি, তোমার পাশের পুতুল, তার পাশের জন
কাঁচের বাক্সকে ঘর ভেবে দাঁড়িয়ে থাকো ঠায়।

তুমি রসুন সভ্যতার থেকে আদা বা গোলমরিচের দিকে 
যেতেই পারো। যদি না সেদিকে চোখ পড়ে থাকে দাদাদের,
হুমদো লোমশ বেড়ালের মতো দাদারা 
তোমাদের ঠেলে দেবে কোন দিকে এখনো জানো না,
তোমাদের বাপ, আমার ঠাকুরদা, তাদের দাদা পরদাদা 
কেউই জানেনি আগেভাগে – 
মাতলা, বুড়ি গঙ্গা পেরিয়ে কোন আবাদে
অথবা মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র উজিয়ে কোথায় ঠাঁই পাবে 
পায়ের পাতারা,
জানেনি তো চলমান শ্রমিক সভ্যতা। 

তবু কী কঠিন হাত ছিল তাদের,
সেই সব পেশি ছিল সতেজ সবল
বেড়াল দাদারা জানত যে হাত বসতি বানায়
একদিন একসাথে থাবা হয়ে ফুঁসে উঠবেই
ভয় পেত, পায় –  
তাই ভগবান নামের এক সালিসি বসায়।

আইন, আদালত, ব্যাঙ্ক বইয়ের খেলনা দিয়ে 
ঘিরে রাখে তোমাদের,
কিছু আশ্চর্য কথাকার এসে শোনায় পাপ-পুণ্যের গল্প
মানচিত্র থেকে তোমাদের উপরে হাতে ধরিয়ে দেয় ম্যাপ-বই
আদিম নারীর থেকে স্বায়ত্ত কাম কেড়ে নিয়ে ধরায় খাজুরাহ
বীজাণুর চাষ করে দিয়ে পকেট কাটতে পাঠায় হাসপাতালে
অনাচারে ভরিয়ে দিয়ে বলে নৈতিকতা শেখো। 

তবুও তোমাকে যেতে যেতে হবে শ্রমিক সভ্যতায়
সমস্ত পায়ে চলা পথগুলো একদিন মিশে যাবে
নিশ্চিত শ্রমিক সভ্যতায়। 

                                                     









                                    

মন্তব্যসমূহ

  1. নিজেকে সেঁকে নিলাম, কারণ "আগুন এসময়ে যেখানে যেদিকে জ্বলে, চোখে পড়ে..."

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দীপঙ্কর বাগচীর কবিতা paul gauguin  ঈশ্বর ও গাধার সংলাপ   সকল কাজের কাজ, ফেলে আসে আমাদের গাধা এ জীবন ঘূর্ণমান, এ জীবন বস্তুতঃই বাধা কে তবে ফিরেছে দূরে, সন্ধ্যা সূর্যে এতো রঙ করা বিষাক্ত বীজের ক্ষেত ছুঁয়ে আছে যেভাবে পাহারা এই রাত্রি নমাজের, এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু, আছে নাকি দিনের অদূরে মানুষের মতো ঠোঁট, মানুষের মতো কেউ বসে আমার সমস্তবেলা কেটে যায় কীসের আবেশে ঋতুও যখন আসে ধস্ত হয়ে বিকারের প্রায় দূরে দূরে জ্বলে তারা, বালিকারা কোথায় হারায় দিনের ভিতরে দিন ডুবে গেলে গোলার্ধের পরে কে তবে এসেছ এই রাত্রিদিন এমন আষাঢ়ে এই রাত্রি নমাজের এই রাত্রি প্রার্থনার ঘোরে উপাসনা ছাড়া কিছু আছে নাকি দিনের অদূরে বাতাস কচুরিপানার দেশে, এসে গেছি অবশেষে ভাঙা বাড়িটার আলো বলেছিলে সব ভালো কোন পথে তোমাকে হারাই  আমার তো কিছু নাই , অন্ধকার বনে তাই একা একা ঘুরে গেছি সব কিছু মিছি মিছি বাতাসের দোলা লেগে ,এসেছে সবাই যতো ভাবি এলোমেলো ,কুয়াশায় কারা এলো ঝোড়ো হাওয়া বুকে নিয়ে এপাড়া ওপাড়া দিয়ে উড়ে যায় টিন ছাদ ,দেখো সাঁই সাঁই তুমি বলেছ...
অরিত্র সান্যালের গুচ্ছ কবিতা  কয়েকটি লেখা                                 [ যা আমি গিলে খেয়েছি এতকাল প্রতিটি নিরুদ্দেশের অন্ধকার আমার মধ্যে আজ অনর্গল উসখুস করে কালো কালি ] ১। গর্ত থেকে পতন উপচে পড়ছে আমার বিশাল সব জাহাজ একে একে শূন্যতা গেঁজিয়ে ভেসে ওঠে মণি ঘিরে এক বন্ধ মাল্লা আমার আমার চারিদিক সম্পূর্ণ নয় এখনও ২। চার পাঁচটা অসম্পূর্ণ বাক্যের মধ্যে আছি এখন সে সব থেকে সুতো বেরিয়ে আছে হাওয়া নাড়ায় তাদের একটা পর্দা যেভাবে আমাদের ঘিরে রাখে বাইরে অনাদি শীতল কাল ৩। একটি প্রশ্নচিহ্নের আঁকশি নেমে আসে কে কে ফিরে যেতে চাও ফেলে আসা মাধ্যাকর্ষণে? খাদ থেকে এখন আমার স্বর হাউই ছুঁড়ল একটি- তারপর? জীবন অনন্ত শূন্যতায় উদ্ধৃত ৪। আমার পিছনে এখন তুমি এসে বসেছ-  শান্ত নিস্পন্দ ঝরে যাওয়া এখন শুধুই যতটুকু বয়ে নিয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস আমি তোমার না-লেখার ...
অনুবাদ কবিতা কবীরের কবিতা অনুবাদ – চৈতালী চট্টোপাধ্যায়  চৈতালীর কবীর ১ মন তো অসাধু ব্যবসায়ী। তাতে লগ্ন হয়ে আছে এক কুটিলা পত্নী আর পাঁচ-পাঁচটি বেয়াড়া সন্তান! মন,ফিরবে না। বলছে কবীর, মনে ভারী শক্ত গিঁট পড়ে গেলে, সহজে খোলে না ২ কোরানে কিংবা বেদে, এ-শিক্ষা কোথাও নেই! লাগাম লাগিয়ে মুখে, পিঠে জিন পরাও, রেকাবে পা দাও। তারপর চলা-মন, তারপর পথ,নির্জন, সোজা স্বর্গে গেছে ৩ লোভ যেন ঢেউয়ের মতো। তোমাকে ডোবাতে কিছু জল লাগে না! রাজসিংহাসনে রাজা। রানী, রূপবতী। পূজারী পণ্ডিত, কিংবা ভেল্কি-দেখানো এক যোগী। নির্জলা সমুদ্রটিতে সব ডুবে গেলো! তবে,কে জীবিত? যার মন শিলায় গ্রস্ত, কবীর জানালো ৪ তীরে বসে থাকি। নৌকো আসবে। কোথায় যাচ্ছি? স্বর্গ আদৌ আছে নাকি! ওহে নয়নপথগামি! তোমাকে সর্বত্র দেখি আমি। কবীর মিনতি করে, এ-যাত্রা দাও রেহাই! আছি বেশ, এখানেই তো আমার ঠাঁই ( কবীর অনুবাদ করেছি বটে, কিন্তু সেই আধ্যাত্মিকতা বোঝার সাধ্য আমার নেই। সেই সময়ের ভক্তি ...