করোনার সময়ের কার্ল
প্রসূন মজুমদার
হেডঅফিসের বড়বাবুর হঠাৎ মহা ঝামেলা। গোঁফচুরি যাওয়ার থেকেও এখন তার বড়ো দুশ্চিন্তা। করোনাভাইরাস। মুশকিল হলো গেলুম গেলুম বলে হাঁকলেও এখন কেউ তাদের ধরে তুলতে আসছে না। এখন দেশবিদেশের আপামর সন্তান সোশাল ডিস্ট্যান্সিং- এ ব্যস্ত। বড়োবাবু তাই প্রায় ধরাশায়ী। নিজে থেকে খলবলিয়ে ওঠার তাগিদে তাই তিনি চিল্লিয়ে পাড়ামাথায় করছেন,কিন্তু সবাই যে তাঁর চিৎকারে খুব একটা কান দিচ্ছে তেমনটা মনে হচ্ছে না। এদিকে চেয়ারের লড়াই এক্কেবারে সামনে এসে পড়েছে। এই বছরের শেষের দিকেই হেড অফিসে নির্বাচনের ঘন্টি বাজবে। এইসময়ে প্রপাত ধরণীতলে হয়ে পড়ে থাকা যায় না। মাঝেমাঝেই তিনি বুঝতে পারছেন যে এভাবে চললে কুর্সি ফেরত পাওয়া অসম্ভব। তাঁর বিশ্বব্যাপী অফিসের এককোনার এক চিনে চেয়ার থেকেই তাঁর গোঁফচুরির ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস। মজা হচ্ছে যে তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না যে চিন থেকে যে গয়লার গোঁফ এসে তাঁর ঠোঁটের আগায় সেঁটে বসার থ্রেট দিচ্ছে তাকে তিনি সামাল দেবেন কীকরে।
ভারত বলে তাঁর অফিসের একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি তিনি ইদানিং ব্যাপক আরামে চালাচ্ছিলেন। সেখানে তিনি নিজেকে রামচন্দ্র ( আপনারা ভুল করে ট্রামচন্দও পড়তে পারেন) সাজিয়ে সেখানকার মাতব্বর হিসেবে ভক্ত হনুমানকে ফিট করেছিলেন। ভারতের অফিস থেকে কোটি কোটি ডলারের মুনাফা তাঁকে রসেবশে রেখেছিল।তিনি সত্বর সেই অফিসে লকডাউন ঘোষণা করতে বলেছেন আর কড়া করে বলে দিয়েছেন যে শক্তিশেল আছড়ে পড়া হেড অফিসে হনুমান যেন হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নামের বিশল্যকরণী উড়িয়ে নিয়ে যায়।হনুমান বাধ্য ভক্ত, ফলে সে ওষুধ পাঠাচ্ছেও বিস্তর। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। তাই উপাধিধরা বৈজ্ঞানিক ভৃত্যদের দিয়ে তিনি এবার রেমডিসিভির বলে একটা কাঁটামারা ওষুধ বার করিয়েছেন। হনুমান অবশ্য মিনমিন করে বলেছিল এই ওষুধ আমার বানরসেনা কেন পাবে না। তিনি কোনও অভয়বাণী আপাতত শোনাননি। আপাতত তিনি চেয়ার নিয়ে ব্যাস্ত। হেড অফিস বাঁচলে তবেই গোটা ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে। তাই হেডবাবুদের পরিচর্যা আগে হবে। যেমন চিরকালই হয়। যেমন ডারউইন বলেছিলেন, ' সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট '। রেস্তই এখানে ফিটসার্টিফিকেট দেয়। তাই ফিটেস্ট তারাই যাদের ধন বর্ধমান। ধনের সঙ্গে ধান্যের একটা যোগ আছে বটে কিন্তু মালকড়ি থাকলে বানররাজ্য থেকে ধান্য কেন সমস্ত মান্য আর প্রামাণ্য সম্পদই হেড অফিসে তুলে আনা যায়। শুধু একটা ভক্তিগদগদ হনুমান থাকলেই সেটা সম্ভব। ' পবলেম' বানররাজ্য নিয়ে নয়, গোঁজাটা গুঁজে আছে বানরদের পাশে নাকচ্যাপ্টা প্যাঁচার রাজ্যে। তারা রাত জাগে। প্যাঁচারা রাতারাতি একটা নতুন ভাইরাস আমদানি করেছে। ভাইরাসের নাকও চ্যাপ্টা কিনা ভাইরোলজিস্ট নামের বকচ্ছপগুলো বার করতে পারছে না। তবে কাজ চলছে। মিথ্যেকে সত্যি বলে চালানোর যে মেশিনগুলো ঘড়ঘড় করছে তারা এখন বুঝতে পারছে না, প্যাঁচার তৈরি ভাইরাসটা সত্যি না মিথ্যে। যদি সত্যি হয় তাহলেও বিপত্তি, সত্যিকে সত্যি বলে হেড অফিস চালানো বন্ধ করেছে অনেকদিন,সত্যির মেশিনে মরচে ধরে একেবারে যা - তা অবস্থা।
এমন যখন দিনকাল তখন ঘরে আটকে থাকতে থাকতে আমার মাথাও বোধহয় আউলে গেছে।আমার কাছে আজকাল সাদা নয়,কালো মার্ক্সদাদু ঘনঘন হানা দিচ্ছে। রাতদুপুরে এসে পড়লে গল্পের আসর বসাচ্ছি আমরা। সেইসব গল্পের কয়েকঝলক আজ লিখে রাখতে ইচ্ছে হল।
আমি --- ব্যাপারস্যাপার কী বুঝছো, দাদু?
মার্ক্স --- মরেও আমার মৃত্যু নেই।
আমি --- এটা আমি জানি। এটা নয়, করোনাভাইরাস?
মার্ক্স --কতোদিন বাড়িতে রয়েছো?
আমি --- মাসখানেকের বেশি।
মার্ক্স ---আছ তো দিব্যি খেয়ে পরে। হনুমানটা কি বড়ো হনুমান সে আর তুমি বুঝবে কীভাবে?
আমি --ব্যাটা করবেটা কী? সেই যে বুকচিরে ট্রামসীতা দেখিয়েছে তারপরে আর করার কিছু আছে?
মার্ক্স --- সে নেই বটে কিন্তু আমার নাম করে যে বাঁদরগুলো বাঁদরামি করে বেড়ায় তাদের এ রাজ্যে দেখেছো?
আমি ---এ রাজ্যে! এ রাজ্যে মাস্কবাদী বাঁদররা তো দেখলাম মাস্কের ওপর আর একটা মাস্ক পরে দেড়কোর মতো একটা বাঁশ হাতে সোশাল ডিস্ট্যান্স মেন্টেন করে প্রতিবাদ করছে।
মার্ক্স --- কার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর কী যে প্রতিবাদ কিছুই বুঝলাম না।
আমি -- দাদু, ওরা রেশনে চালের সমবন্টন নিয়ে দাবি জানাচ্ছে, ভালো তো!
মার্ক্স --- রিলিফ দিয়ে গরীবসেবার কথা আমি ওদের বলেছিলাম বুঝি?
আমি ---- কিন্তু এখন কি বিপ্লবের সময়?
মার্ক্স ----তাহলে এখন কিসের সময় গো,ভিক্ষে দেওয়ার? কয়েকটা মামদোও দেখছি ভিক্ষে দিয়ে দাঁত কেলিয়ে ছবি দিচ্ছে।লেনিনটাও অন্তত যদি বেঁচে থাকত,এদের দাঁতের পাটি উপড়ে ছাড়তো নিশ্চয়ই।
আমি -- দাদু, তাহলে এই গরীব বানরসেনারা বাঁচবে কিকরে?
মার্ক্স -- এই একটা বেঁড়ে কথা বললে, সেনা। তুমি দেখলে, আজ কেমন বায়ুসেনাদের এরোপ্লেন থেকে স্বাস্থ্যসেনার মাথায় ফুল ঝরল? মজাটা দেখো এই লকডাউনে যে ফুল ঝরালো তার নাম সেনা, যার মাথায় ঝরাল তার নামও সেনা,কিন্তু যে ফুল ফোটালো,যে ফুল বয়ে নিয়ে এল, যে বাজারে বসে হাজার লোকের ছোঁয়াছুঁয়ির ঝুঁকি নিয়ে ফুল বেচল, তারা কেউ সেনা নয়। তাদের থেকে শুধু কেড়েই নিয়েছ তোমরা।
আমি --- দাদু, কী করা যেত ?
মার্ক্স --- বুঝতে হতো লড়াইটা ওদের ভিক্ষে দিয়ে জেতা যাবে না। ওদের প্রাপ্য সামাজিক সম্মানটা যথাযথভাবে দিতে হবে। সম্মানে,অর্থে, প্রতিরক্ষায় ওদের অধিকার স্বাস্থ্যসেনাদের থেকে একচুলও কম নয়। সেটা যতদিন হচ্ছে না ততদিন মি,ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ট্রামকাকু / রামকাকু আর তোমাদের ওই ছত্তিরিশ ইঞ্চিকে হনুমান বলে খিল্লি করে কোন লাভ নেই, বুঝলে।অনেক বকলাম।ওদিকে আমার জন্মদিন পালন করবে বলে স্তালিনটা বাতি জ্বালিয়ে বসে আছে, যা উত্তেজিত ছোঁড়া,দেরি হয়ে গেলে আবার না,তোমাদের ওই রাস্কেলগুলোর মতো বাজি-বোমা ফাটিয়ে তুর্কিনাচন শুরু করে!
আমি --- দাদু, কী করা যেত ?
মার্ক্স --- বুঝতে হতো লড়াইটা ওদের ভিক্ষে দিয়ে জেতা যাবে না। ওদের প্রাপ্য সামাজিক সম্মানটা যথাযথভাবে দিতে হবে। সম্মানে,অর্থে, প্রতিরক্ষায় ওদের অধিকার স্বাস্থ্যসেনাদের থেকে একচুলও কম নয়। সেটা যতদিন হচ্ছে না ততদিন মি,ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ট্রামকাকু / রামকাকু আর তোমাদের ওই ছত্তিরিশ ইঞ্চিকে হনুমান বলে খিল্লি করে কোন লাভ নেই, বুঝলে।অনেক বকলাম।ওদিকে আমার জন্মদিন পালন করবে বলে স্তালিনটা বাতি জ্বালিয়ে বসে আছে, যা উত্তেজিত ছোঁড়া,দেরি হয়ে গেলে আবার না,তোমাদের ওই রাস্কেলগুলোর মতো বাজি-বোমা ফাটিয়ে তুর্কিনাচন শুরু করে!
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন